সুন্দরবনে দস্যু দমনে র্যাবের অভিযান শেষ হতে না হতেই বঙ্গেপসাগর থেকে দস্যুরা অন্তত ২০টি মাছ ধরা ট্রলারসহ ১০৬ জেলেকে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পূর্ব সুন্দরবন সংলগ্ন ১নং ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকা থেকে জলদস্যু বাহিনী মুক্তিপণের দাবিতে এসব জেলে ও ট্রলার অপহরণ করে। বেপরোয় দস্যুরা মুক্তিপণ পরিশোধের জন্য অন্য জেলেদের কাছে দুটি মুঠোফোন নম্বরও দিয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
অপহরনের শিকার এ সব জেলেদের অধিকাংশের বাড়ি বরগুনা, পটুয়াখালী ভোলা ও বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায়।
সোমবার রাতে খুলনাস্থ র্যাব-৬ এর একটি দল খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা অন্তর্গত পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের বাদুর ঝুলি খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৩টি দেশী বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রসহ বনদস্যু ইলিয়াছ বাহিনীর এক দস্যুকে গ্রেপ্তার করে।
এ সব আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৭টি বিদেশী দোনলা বন্দুক, ৯টি একনলা বন্দুক, পাঁচটি বিদেশী দশমিক ২২ বোর রাইফেল, একটি বিদেশী এইট শ্যুটার গান ও একটি থ্রি নট থ্রি কাটা রাইফেল এবং দেড় হাজার রাউ- বিভিন্ন ধরণের গুলি উদ্ধার।
গ্রেপ্তার বনদস্যু মো. শাহীনূর সরদার ওরফে শাহীন (৩২) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মুড়োগাছা গ্রামে বাসিন্দা।
সাগরে অবস্থানরত, জেলেরা জানান, ঘটনার কিছু পর সোমবার মধ্য রাত থেকে ঘটনাস্থলের নিকটস্থ বঙ্গোপসাগরের ফেয়ার ওয়ে বয়া এলাকায় হামলা চালায় বনদস্যু মাস্টার বাহিনীর দস্যুরা।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা ট্রলারসহ জেলে অপহরণের এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মংলাস্থ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, শতাধিক জেলে অপহরণ হয়েছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।
মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা জানান, পাথরঘাটা থেকে ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে ফেয়ারওয়ে বয়া পয়েন্টে মাছ ধরার সময় সোমবার গভীর রাতে সুন্দরবনের জলদস্যু মাস্টার বাহিনীর ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি সশস্ত্র দল হামলা চালিয়ে হয়েক লাখ টাকার মাছ ও রসদ সামগ্রী লুট করে।
তারা অন্তত ২০টি ট্রলারসহ শতাধিক জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে নিয়ে যায়। দস্যুরা যাবার সময় ট্রলার মালিকদের যোগাযোগ করার জন্য অন্য জেলেদের কাছে দুটি মুঠোফোন নম্বরর দিয়ে যায় বলে তিনি জানান।
অপহৃত ট্রলারের মধ্যে স্থানীয়ভাবে কয়েকটি ট্রলারের নাম জানা গেছে। এগুলো হলো এফবি রিয়াজ উদ্দিন, এফবি রিনা, এফবি মা-বাবার দোয়া, এফবি সিরাজুল হক, এফবি বশির, এফবি আক্তার ও এফবি মা।
এফবি রিয়াজ উদ্দিন ট্রলারের মালিক পনু আকন জানান, জেলেদের মাধ্যমে অপহরণকারী দস্যুদের মুঠোফোন নম্বর পেয়ে অন্য ট্রলার মালিকদের সাথে যোগাযোগ করা শুরু করেছি।
সুন্দরবনে দস্যু দমণে কর্মরত র্যাব -৮ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল ফরিদুল আলম বলেন, মঙ্গলবারের জেলে অপহরণের বিষয়ে শুনেছি। সাগর থেকে ফিরে আসা জেলেরা প্রায়ই ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় দস্যুদের হামলার অভিযোগ করে থাকেন। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের ঐ এলাকায় অভিযান চালানোর মত জলযান না থাকায় আমরা কার্যত সেখানে যেতে পারি না।
তিনি দাবি করেন, ধারাবাহিক অভিযানের কারণে সুন্দরবনে সার্বিকভাবে দস্যুতা কমেছে। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে দস্যুদের কিছু চাপ থাকলেও পূর্ব বিভাগে দস্যুদের চাপ নেই বললেই চলে।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের স্টাফ অফিসার লে. এ এম রাহাতুজ্জামান বলেন, ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় মুক্তিপণের দাবিতে জেলে অপহরণের খবর আমরা শুনেছি। তবে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাইনি। ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের নিয়মিত টহল দল রয়েছে।
র্যাব-৬ এর জেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জানান, সুন্দরবনে দস্যু দমনে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও বনরক্ষীদের সমন্বয়ে যৌথ টাস্কফোর্স কাজ করছে। আমরা প্রতিনিয়ত দস্যুদের গ্রেপ্তার ও জেলেদের নিরাপত্তা বিধানে কাজ করছি।
পশ্চিম সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায় এখনো ইলিয়াস বাহিনী, রাজু বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, আনারুল বাহিনী ও আমির বাহিনী নামে কিছু দস্যুদল তৎপর রয়েছে। তাদের নির্মূল করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।