‘কোন না কোন মহল থেকে আমাদের দেশে বর্তমানে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধীকার কমিশনের চেয়ারম্যন ড. মিজানুর রহমান।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার পালপাড়া গ্রামে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা ইব্রাহিম মোল্লার পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘যখন দেশে মানবতাবিরধী অপরাধে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের দন্ড কার্যকর হওয়া প্রায় আসন্ন, এ রকম একটি সময়কে বেছে নেওয়া হয়েছে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্তিতি সৃষ্টি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য। এ দু’টিকে বিচ্ছিন্ন হিসাবে দেখলে হবে না। আমার কাছে মনে হয় এগুলোর মধ্যে অন্তরনিহিত সম্পর্ক রয়েছে।’
এজন্য সরকারকে আরও বেশি সতর্ক হবার আহ্বান জানিয়ে মানবাধীকার কমিশনের চেয়ারম্যন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কোন রকম কালক্ষেপন ও বিলম্বের সুযোগ নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শেষে করতে যত বেশি সময় নেওয়া হবে, আমাদের শত্রুদের তত বেশি সময় দেওয়া হবে এ রাষ্ট ও জনগনের বিরুদ্ধে আরও অপপ্রচার চালানোর।’
নিহতের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে মিজানুর রহমান বলেণ, ‘পুলিশ বাহিনীর এক সদস্য নিজের প্রাণ দিয়ে বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে আমাদের সাবধান করে গেছে এবং কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটতে দেননি। এর জন্য আমরা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মিজানুর রহমনা বলেন, বিদেশি বিভিন্ন রাষ্টে হত্যা ও খুনের ঘটনা ঘটলেও সেখানে বিদেশি নাগরিকদের চলাচলে কোন নিশেধাজ্ঞা জরি করা হচ্ছেনা। সেখানে হটাৎ করে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় একজন বিদেশি নাগরিক হত্যায় পর বিভিন্ন রাষ্ট তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাচলে রেড এলার্ট জারি করছে। এর মাধ্যমে তারা সাধারণের মাঝে ভীতির সৃষ্টি করছে।’
যারা অপরাধমূলক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে ভীতির সঞ্চার করতে চাইছে এবং যে রাষ্টসমূহ সেটিকে অবলম্বল করে বাড়তি কিছু সতর্কতা জারি করার চেষ্টা করছে, এই দুটোর মধ্যে কোন ধরনের সমন্বয় থাকতে পারে কিনা (?) সাধরণ জনগনকে তা ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
‘এএসআই ইব্রাহিম হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীরা এই দেশের শত্রু, জনগনের শত্রু। এমন নৈরাজ্যবাদিরা সমগ্র মানবজাতি এবং বিশ্ব সভ্যতার শত্রু’ বলে অভিহিত করে তিনি বলেণ, ‘ইব্রাহিম মোল্লা তার মৃত্যু দিয়ে সমগ্র জাতিকে ঋণে আবদ্ধ করে গেছেন। আমরা কখনই সন্ত্রাস বাদের কাছে আত্মসমর্পণ করব না।’’
ইব্রাহিম মোল্লার পরিবারকে যেন ভবিশ্যতে কোন ধরনের অসচ্ছলতার মধ্যে পড়তে না হয় এজন্য সরকার ও রাষ্টের প্রতি দাবি জানান ড. জিমানুর রহমান।
এসময় সেখানে উপস্থিত বাগেরহাট সদর সার্কেলে সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা গোটা পুলিশ বাহিনীর গর্ব।’
জনগনের নিরাপত্তার কাজে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসীদের হামলায় তার মৃত্যু হয়। এসময় পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে নিহতের অসহয় পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মজিবর রহমান, কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শমসের আলীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় তার সাথে ছিলেন।
এর আগে, বেলা ১২টায় নিহত ইব্রাহীম মোল্লার বাড়িতে পৌঁছে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান মরহুমের কবর জিয়ারত করেন। পরে তার পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন এবং সান্তনা দেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
গত ২২ অক্টোবর রাতে রাজধানী ঢাকার প্রবেশ মুখে পুলিশের একটি তল্লাসি চৌকিতে কর্তব্য পালনকালে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন দারুস সালাম থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ইব্রাহিম মোল্লা। হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজন এবং এলাকাবাসী।