সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগার রক্ষায় বাঘ হত্যার প্রচলিত আইনের সাজা কারাদণ্ড থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করার দাবি উঠেছে।
শনিবার (১০ অক্টোবর) বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সম্মেলনে কক্ষে বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ে দিনব্যাপী এক কর্মশালায় এ দাবি ওঠে।
প্রচলিত ১৯২৭ সালের বন আইন অনুযায়ী বন্য প্রাণী হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছর এবং সর্বনিম্ন ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ড। অন্যদিকে, ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে বন্য প্রাণী হত্যায় সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর ও সর্বনিম্ন ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ‘বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ এর আওতায় খুলনা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ ও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ যৌথভাবে কর্মশালাটি আয়োজন করে। কর্মশালায় বাঘ সংরক্ষণ, সর্বশেষ বাঘ গণনা ও সুন্দরবনের সার্বিক অবস্থা বিষয়ে তিনটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়।
কর্মশালায় অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, বনদস্যুরা সুন্দরবনে বাঘ হত্যা করায় সাম্প্রতিক দুই-তিন বছরে বাঘ হত্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। বনদস্যুদের প্রতিহত না করতে পারলে দ্রুতই বাঘ সুন্দরবন থেকে হারিয়ে যাবে। বাঘ হত্যায় প্রচলিত আইন দুটির সাজা বাড়িয়ে কারাদণ্ডের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ড করা উচিত।
কর্মশালায় জানানো হয়, সর্বশেষ বাঘ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ৮৩ থেকে ১৩০টি। যার গড় করলে দাঁড়ায় ১০৬। বিগত বছরগুলোতে সুন্দরবনে গড়ে দুটি বাঘ চোরাশিকারীদের হাতে মারা পড়ত। কিন্তু চলতি বছর এই সংখ্যা হয়েছে বেড়ে ১২তে দাঁড়িয়েছে। সুন্দরবনে এখন বনদস্যুরা বাঘ হত্যা ও পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। বিষয়গুলো বন বিভাগের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. ইউনুস আলী বলেন, সংরক্ষিত বনসহ সুন্দরবনের ভেতরে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল এবং সুন্দরবন থেকে সব ধরনের সম্পদ আহরণ বন্ধের বিষয়ে প্রস্তাব সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। এই বিধান কার্যকর করা গেলে সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও দস্যু শনাক্ত করা সহজতর হবে।
তিনি বলেন, ক্যামেরা ট্র্যাপিং বা পায়ের ছাপ গণনার (পাগমার্ক) মতো বাঘ গণনার পদ্ধতিগুলো শতভাগ ত্রুটিমুক্ত না হলেও বিজ্ঞানসম্মত। এসব পদ্ধতি প্রয়োগ করে কাছাকাছি একটি পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। উপযুক্ত গবেষণা না হওয়ায় বন বিভাগের কাছে এখনো সুন্দরবনের বাঘ বিষয়ে অনেক তথ্য সংকট রয়েছে। বাঘের রোগ-ব্যাধি, মা বাঘের প্রজনন সামর্থ্য, সুন্দরবনে বাঘের টিকে থাকার সক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. আকবর হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাঘের চামড়া ও হাড়সহ শিকারি বা বহনকারীদের ধরতে পারলেও পাচারকারী চক্রের মূল হোতা ও বিনিয়োগকারীদের ধরা যাচ্ছে না। তাদের ধরতে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের কমান্ডর ক্যাপ্টেন কাজী মেহেদী মাসুদ বলেন, বন বিভাগসহ সুন্দরবন ও তার সম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এখনো সমন্বয়, আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে।
বাগেরহাট বন আদালতের বিচারক মো. জাহিদুল আজাদ বলেন, যথাযথভাবে মামলা উপস্থাপন না করতে পারায় এবং জব্দকৃত আলামত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা শনাক্ত না হওয়ায় অনেক সময় অভিযুক্তরা অব্যাহতি পান। চলতি বছর বাগেরহাট বন আদালতে নিষ্পত্তিকৃত মামলার হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ২৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে।