বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক নৌ প্রটোকলভুক্ত মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল দিয়ে দীর্ঘ ৫ বছর পর ভারী নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে।
শনিবার (৩ অক্টোবর) বিকালে বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধানে পরীক্ষামূলকভাবে এ পথে ১০-১১ ফুট ড্রাফটের ৪টি লোডবাহী লাইটারেজ জাহাজ চলাচল করে।
এর আগে সকালে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের খনন কাজ পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর মোজাম্মেল হক।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপস্থিত ছিলেন, বিআইডাব্লুটি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ড্রেজিং) এ এইচ ফরহাদ উজ জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো: তারিকুল হাসান, উপ-পরিচালক আশরাফ হোসেন প্রমুখ।
ফরহাদউজ্জামান বলেন, শনিবার বিকালে জোয়ারের সময় ১০-১১ ফুট ড্রাফটের ৪টি জাহাজ পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করেছে। বর্তমানে এ চ্যানেলে সব ধরনের জাহাজ চলাচল করতে পারবে।
রোববার (৪ অক্টোবর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সব ধরনের নৌ-যান (জাহাজ) চলাচল করবে এ নৌ-পথে। এর আগে চলতি বছরের জুন মাস থেকে জোয়ারের সময় সর্বচ্চ ৮ ফুট ড্রাফটের ছোট ছোট লাইটারের জাহাজ চলাচল শুরু করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করবো বেশি ড্রাফটের জাহাজ চলাচলের জন্য চ্যানেলটি সচল রাখতে। আমরা নৌ-যান মালিকদের অবহিত করবো এ চ্যানেল থেকে জাহাজ চলাচলের জন্য।
ভারতের সঙ্গে নৌ-প্রটোকল রুটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-পথটি। মূলত মংলার পশুর নদীর সঙ্গে বলেশ্বর নদের ঘষিয়াখালী অংশে এটি সংযুক্ত হয়েছে। ওই নৌ-পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১ কিলোমিটার।
১৯৭৩ সালে ২ নদীর মাঝে ৬ কিলোমিটার নদী খনন করে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-পথের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু প্রচুর বালি ও পলির কারণে প্রতি বছরই নৌ-পথটি দ্রুত ভরাট হতে থাকে।
একপর্যায়ে এ পথে নৌ-যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেলে ২০১০ সালের ২৮ এপ্রিল এর রামপাল অংশে খনন কাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু খননের গতির চেয়ে পলি জমার প্রবণতা বেশি হওয়ায় তিন মাসের মাথায় ড্রেজিং কার্যক্রম বাতিল করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
এর পর ২০১১ সালে থেকে এ নৌ-পথটি পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএ।
এর পর সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বিকল্প একটি নৌ-পথ চালু করে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। ফলে সন্নাসী, রায়েন্দা, বগী, সুন্দরবনের শরণখোলা, দুধমুখী, হরিণটানা, আন্ধারমানিক, মৃগমারি, চাঁদপাই, জয়মনিগোল, মংলা পথে চলতে শুরু করে ভারি জাহাজ-কার্গো।
সংরক্ষিত ওই বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে নৌ-যান চলাচল করায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
অন্যদিকে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-পথটি বন্ধ থাকায় ভারত-মংলা-ঢাকা রুটের নৌ-যানগুলোকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। মংলা বন্দর থেকে পণ্য বহনকারী জাহাজগুলোকেও নারায়ণগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাতায়াত করতে বিকল্প পথ খুঁজতে হয়। একই অবস্থা ঘটে বাংলাদেশ-ভারতের নৌ-যানগুলোর ক্ষেত্রেও।
এভাবে জাহাজ চলাচলের ফলে সুন্দরবনে শ্যালা নদী, মরা ভোলা ও ভোলা নদীতে তিন তিনবার লাইটারের জাহাজ ডুবে বনের জীব-বৈচিত্র্য মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে।
এলাকাবাসী জানান, আন্তর্জাতিক প্রটোকলভুক্ত চ্যানেল সংলগ্ন প্রায় আড়াই শতাধিক সরকারি খালে অবৈধ বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করায় চ্যানেলটি দ্রুত নাব্যতা হারায়। ওই প্রভাবশালীদের দখলে থাকা অবৈধ বাঁধ অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে প্রায় ২ মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শে ১২০০ বাঁধের মধ্যে প্রশাসন মাত্র ৩০০ বাঁধ অপসারণ করে বিআইডব্লিউটিএ।
তবে, পুরো বাঁধ অপসারণ করা হলে চ্যানেলটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। এদিকে সংযোগ খালের অবৈধ বাঁধ কেটে দেওয়া হলেও আবার প্রভাবশালীরা তা আটকে দিয়ে চিংড়ি চাষ করছেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।