বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলের দুবলার চর ও সংলগ্ন এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক জেলের এখনও সন্ধান মেলেনি।
রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) উত্তাল বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় বাগেরহাটের ১১টি ট্রলারসহ বেশ কয়েকটি ট্রলার। এতে নিখোঁজ হয় কয়েকশ জেলে।
রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা দুবলা জেলেপল্লীর বিভিন্ন চর, ফেয়ারওয়ে বয়া ও হিরণ পয়েন্ট এলাকা থেকে শতাধিক জেলেকে উদ্ধার করলেও এখনও শতাধিক জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
তবে সুন্দরবনের দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহানূর রহমান মামীম দাবি করেন, ঝড়ের কবলে পড়ে অন্তত ৮০টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়।
তিনি জানান, রোববারের ঝড়ে বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট ও খুলনার অন্তত ৮০টি ট্রলার ডুবে যায়। এতে সহস্রাধিক জেলে সাগরে পড়ে যায়। পরে তাদের অধিকাংশই নিজেরা বিভিন্নভাবে আত্মরক্ষা করেন।
| সাগর ও উপকূল থেকে আরো ২৬ জেলে উদ্ধার
এদিকে, ঝড়ে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগি গ্রামসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৭০ জেলের সন্ধান মেলেনি।
এদের মধ্যে কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের বগা গ্রামেই নিখোঁজ রয়েছেন ৪৭ জন জেলে। উদ্ধার হয়েছেন ওই গ্রামের ১১ জন। তারা ঝড়ের সময় সাগরে মাছ শিকার করছিলেন।
বগি গ্রামের নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন ডুবে যাওয়া ট্রলার এফবি আউয়ালের ১২ জন, এফবি শাহ জালালের ১৪ জন, এফবি রূপকের ৯ জন, এফবি সজলের ১২ জন। এসব নিখোঁজ জেলে পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম।
এ ঘটনায় এফবি আউয়ালের মালিক রুস্তম বাওয়ালী সোমবার কচুয়া থানায় তার ট্রলারের ১২ জেলে নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড দুবলা জেলেপল্লীর বিভিন্ন চর, ফেয়ার ওয়ে বয়া ও হিরণ পয়েন্ট এলাকা থেকে শতাধিক জেলেকে উদ্ধার করেছে।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে নৌ-বাহিনী ৩৫ জনকে, কোস্টগার্ড ৬৬ জনকে উদ্ধার করেছে। এদের বাড়ি বাগেরহাট, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনাসহ বিভিন্ন এরাকায়।
নৌ-বাহিনীর জাহাজ বিএনএস শাহ্ পরাণের মাধ্যমে উদ্ধার ৩৫ জেলেকে সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ নৌ-বাহিনীর মংলাস্থ ঘাঁটিতে আনা হবে বলে বলে নৌ-বাহিনীর দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
| ঝড় থেকে বাঁচতে গিয়ে লাখ টাকা জরিমানার ফাঁদে
এছাড়া কোস্টগার্ড ও সুন্দরবন বিভাগ তাদের কাছে থাকা উদ্ধার জেলেদের বিভিন্ন মাছ ধরা ট্রলারে করে লোকালয়ের উদ্দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে।
এখন পর্যন্ত ঝড়ে ডুবে যাওয়া ট্রলার বা নিখোঁজ জেলেদের কোনো সরকারি পরিসংখ্যান জানা যায়নি। তবে পিরোজপুর জেলার পারেরহাট মৎস্য আড়তের আড়ৎদার আব্দুল হাই সম্ভাব্য নিখোঁজ জেলেদের প্রাথমিক তালিকা করেছেন। সেখানে বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৫৪ জনের নাম রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, রোববার ভোররাতের ঝড়ে নিমজ্জিত বিভিন্ন ট্রলারের ১৫ জন জেলে প্রায় ৩৫ ঘন্টা সাগরে ভেসে থাকার পর সোমবার সকালে দুবলা জেলেপল্লীর মেহের আলী চরে সাতরে উঠে আসতে সক্ষম হন। এছাড়া স্থানীয় জেলেরা মেহের আরী চরের কাছে ডুবে যাওয়া এফবি মান্নানসহ তিনটি এবং আলোর কোলের কাছে ডুবে যাওয়া চট্টগ্রামের এফবি অপুসহ তিনটি ট্রলার উদ্ধার করতে পেরেছে।
বাগেরহাট কে বি বাজার মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি এস এম আবেদ আলী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, পরপর দুটি ঝড়ে এখনও এই এলাকার অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন বলে শুনছি। মৃত্যুর খবরও আসছে, তবে আমরা এ বিষয়ে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারিনি।
| সাগর ও উপকূল থেকে আরো ২৬ জেলে উদ্ধার
নিমজ্জিত ও নিখোঁজ ট্রলারের মধ্যে এস এম আবেদ আলী দশটি ট্রলারের নাম জানাতে পেরেছেন। এগুলো হলো, জেলার শরণখোলা উপজেলার অনুপ কুমার বিশ্বাসের এফবি মায়ের দোয়া, কামালের এফবি আরিফ হাতেম মোল্লার এফবি রহিমা ও আব্দুল মান্নানের এফবি মান্নান, কচুয়া উপজেলার বগা এলাকার আবুল ব্যাপারীর এফবি সজল, ঐ গ্রামের আবুল বাওয়ালীর এফবি রূপক, মিজান ব্যাপারীর এফবি খান জাহান, সালাম আড়ৎদারের এফবি সাগর-২ ও রুস্তম বাওয়ালীর এফবি আউয়াল। নিখোঁজ রয়েছে এফবি শাহ জালাল ও ওই ট্রলারের ১৫ জেলে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাঈদুল ইসলাম জানান, সাগর সংলগ্ন এলাকার সুন্দরবনের টহল ফাঁড়ি ও ক্যাম্পগুলোকে জেলেদের উদ্ধারে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের কমান্ডার কাজী মেহেদী মাসুদ জানান, সোমবার বিকেল পর্যন্ত নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে মোট ১০১ জন জেলেকে উদ্ধার করেছেন তারা। তবে এখন পর্যন্ত কারো মৃত্যুর সংবাদ তারা পাননি।