লঘুচাপের ফলে সৃষ্ট ঝড়ের কবলে পড়ে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ইলিশ আহরণে যাওয়া ৩০টি মাছধরা ট্রলার ডুবির খরব পাওয়া গেছে।
নিখোঁজ রয়েছেন এসব ট্রলারের অন্তত ২৫ জেলে। নিখোঁজের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা মৎসজীবি নেতাদের।
নিখোঁজ জেলেদের বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা ও বরগুনার পাথরঘাটার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
এদিকে রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোরে সুন্দরবনের দুবলার চর সংলগ্ন সাগরে ভাসমান অবস্থায় অন্য ট্রলারের সাহায্যে ৩৩ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার দিবাগত রাত ৩টার থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন উপকূলে প্রবল ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয় বলে জানান কোস্ট গার্ড দুবলার চর ক্যাম্পের কর্মকর্তা মো. সোহেল শেখ। এসময় বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া ও হিরণ পয়েন্ট এলাকায় ঢেউয়ের আঘাতে তলা ফেটে ও ঝড়ের কবলে পড়ে বেশ কিছু ট্রলার ডুবে যায়।
উপকূলীয় মৎস্যজীবী নেতারা জানান, দুবলারচর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এসব ট্রলার ডুবির ঘটনায় রোববার বিকাল পর্যন্ত অন্তত ২৫ জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
ডুবে যাওয়া ট্রলারগুলোর মধ্যে ৬টির নাম জানা গেছে। এগুলো হচ্ছে, শরণখোলার রাজৈর গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. কামাল হাওলাদারের এফবি আরিফ, দীপচর গ্রামের আ. মান্নানের এফবি মান্নান, পাথরঘাটা উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়ী শিপন দাসের এফবি সোনাই, সোহারাব হোসেনের এফবি মায়ের দোয়া, খলিলুর রহমানের এফবি খানজাহান-১ এবং সোহাগ হোসেনের এফবি সোহাগ।
নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে তিন জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন, শরণখোলার এমাদুল হাওলাদার এবং পাথরঘাটার কালাম ও এমাদুল হক।
সাগরে যাওয়া জেলেদের বরাত দিয়ে বোরবার বিকালে শরণখোলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবর তালুকদার জানান, শনিবার দিনগত রাত ৪ টার দিকে সাগরে হঠাৎ ঝড় শরু হয়। ওই ঝড়ে উপজেলার রাজৈর এলাকার এফবি আরিফ ও দীপচরের এফবি মান্নান ট্রলার ডুবে যায়। এঘটনায় আরিফ ট্রলারের তিন জেলে নিখোঁজ হয়েছেন।
তিনি আরো জানান, ডুবে যাওয়া এফবি আরিফ ট্রলারের বাকি ১৩ জেলেকে অন্য একটি ট্রলারের জেলেরা উদ্ধার করে পাথরঘাটা পৌঁছে দিয়েছে। এছাড়া উপজেলার খোন্তাকাটা গ্রামের হাতেম মোল্লার এফবি রহিমা ট্রলারের জেলেরা সাগর থেকে ভাসমান আরো ২০ জেলেকে উদ্ধার করে হিরণ পয়েন্টে পৌঁছে দিয়েছে।
বাগেরহাটের উপকুলীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী বলেন, বাগেরহাট কেবি বাজার আড়ৎ ব্যবসায়ীদের ৪টি ট্রলার ডুবির খবর জানাগেছে। তবে এসব ট্রলারগুলোর নাম ও জেলে নিখোঁজের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী মুঠোফোনে জনান, পাথরঘাটা এলাকার ৪টি ট্রলার ডুবে গেছে এবং দুই জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। তবে ট্রলার ডুবি ও নিখোঁজের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই মৎস্যজীবী নেতা।
সুন্দরবনের দুবলার চর কোস্টগার্ড স্টেশনের এক কর্মকর্তা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আবহাওয়া এখন অতিরুক্ত খারাপ। বৈরী আবহাওয়া ও ঝড়ের কবলে পড়ে রাত থেকে ৩০-৪০টি ট্রলার ডুবির খবর পাওয়া গেছে।
সগার ও উপকূলে থাকা সব জেলেদেরকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ডুবে যাওয়া ট্রলার গুলোর বেশির ভাগের জেলেরা অপর মাছধরা ট্রলারের মাধ্যমে উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধরে কোস্ট গার্ডের টহল বোর্ডগুলো কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ (সহকারী বন সংরক্ষক) মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ ট্রলারডুবির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কতগুলো ট্রলার ডুবেছে এবং কতজন জেলে নিখোঁজ হয়েছেন তার সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। বনবিভাগের কর্মীরা এসব তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।
এদিকে সাগর উত্তাল থাকায় ও দুর্যোগের কবলে পড়ে শত শত ট্রলার সুন্দরবনের কচিখালী, সুপতি, কটকা, নারকেলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়েছে।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের দুবলার চর স্টেশনের ইনচার্জ অব্দুল কাউম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ট্রলার ডুবি বা জেলে নিখোঁজের খবর এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে প্রচন্ড ঠেউয়ের আঘাতে তলা ফেটে যাওয়া দুটি ট্রলার উদ্ধার করা হয়েছে। আমার এলাকায় উপকূলের কাছাকাছি থাকা মাছধরা ট্রলার গুলো কোস্ট গার্ড স্টেশনের ঘাটে আশ্রয় নিয়েছে। আবহাওয়া ভালো না হওয়া পর্যন্ত তাদের এখান থেকে যেতে দেওয়া হবে না।
এছাড়া উদ্ধার হওয়া জেলেদের সুন্দরবনের দুবলার চর, সুপতি ও কপিলমুনী কোস্ট গার্ডের ক্যাম্পে আশ্রয় ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।