১১ দিনেও নির্দষ্ট করে জানা যায়নি সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় লোপাট হওয়া অর্থের পরিমাণ।
তবে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছে, এ বিষয়ে নিরীক্ষা চলছে, শিগগিরই লোপাট হওয়া অর্থের পরিমাণ জানা যাবে। নিরীক্ষার সুবিধার্থে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ওই শাখার ব্যবস্থাপকসহ দুই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এদিকে ঘটনা ধরা পড়ার পর থেকে ওই শাখার ঋণ বিতরণের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পলাতক রয়েছেন।
ব্যাংক সূত্র জানা গেছে, ঋণ বিতরণের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বর্তমানে পলাতক শেখ মাহফুজুর রহমানের মা মর্জিনা বেগম ছেলের হয়ে গত পাঁচ দিনে (৬ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর) পাঁচ দফায় ১৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। নিরীক্ষা শেষে ছেলের ওপর যে পরিমাণ অর্থের দায় পড়বে, মর্জিনা বেগম তা পরিশোধের অঙ্গীকার করেছেন। তবে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ জানতে কত দিন অপেক্ষা করতে হবে, তা কেউ নিশ্চিত করতে পারছে না।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন গতকাল শনিবার দুপুরে শহরের রেল রোডের সোনালী ব্যাংকের শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে আসা পাঁচ সদস্যের নিরীক্ষা দলের প্রতিনিধিরা বিশেষ নিরীক্ষার কাজে ব্যস্ত। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞও রয়েছেন ওই দলে। অন্যপাশে সোনালী ব্যাংক খুলনার মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) গঠন করা কমিটির তিন সদস্যও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।
।। বাগেরহাটে সোনালী ব্যাংকের কোটি টাকা লোপাট
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় তিন সদস্যের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা চলাকালে গত ৩ সেপ্টেম্বর অর্থ লোপাটের ঘটনা ধরা পড়ে। এরপর নিরীক্ষা কাজের পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে সোনালী ব্যাংক খুলনা মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) পক্ষ থেকে তিন সদস্য এবং বাগেরহাট আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপকের (এজিএম) পক্ষ থেকে তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গত মঙ্গলবার থেকে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে ওই শাখায় বিশেষ নিরীক্ষা চলছে। এ মুহূর্তে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার কাজ বন্ধ রেখে শুধু ওই শাখার ঋণ বিতরণের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শেখ মাহফুজুর রহমান বাবুর কর্মকালীন দেওয়া ঋণ-সংক্রান্ত নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, নিরীক্ষা ও তদন্তে একের পর এক বেরিয়ে আসছে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। শাখার দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপকসহ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শেখ মাহফুজুর রহমান ঋণ বিতরণের নামে একের পর এক অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছেন। গ্রাহকদের জমা করা অর্থের ২০ শতাংশ ব্যাংকে জমা রেখে এক বছরের মধ্যে পরিশোধ সাপেক্ষে ওডি লোন দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই সব লোন আদায়ের নিয়মকানুন বাস্তবায়ন করলে আগেই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ত বলে ওই সূত্রের দাবি।
আরেকটি সূত্র জানায়, নিরীক্ষা চলাকালে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়লে নিরীক্ষা দল তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংকের খুলনা অথবা বাগেরহাটের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানালে হয়তো ওই শাখার ঋণ বিতরণের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শেখ মাহফুজুর রহমান বাবু স্বজনের মৃত্যুর কথা বলে ব্যাংক থেকে পালিয়ে যেতে পারতেন না।
ব্যাংকের বাগেরহাট আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আশুতোষ মণ্ডল জানান, বিশেষ নিরীক্ষা কাজের সুবিধার্থে এরই মধ্যে ওই শাখার ব্যবস্থাপক দেবব্রত বিশ্বাস ও কর্মকর্তা কাজী মাহমুদা সিদ্দিকাকে (চেক ইস্যুকারী) প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আশুতোষ আরো জানান, পাঁচ সদস্যের নিরীক্ষা দল ব্যাংকে বিশেষ নিরীক্ষা করছে। তবে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি, কতটি স্কিম থেকে ঋণ বিতরণের নামে কী পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিশেষ নিরীক্ষা শেষে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তখন প্রয়োজনীয় আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঋণ বিতরণের নামে আত্মসাৎ হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।
খুলনা জিএম অফিসের তদন্ত কমিটির প্রধান, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. শাহজাহান আলী জানান, ওডি লোন বিতরণের ক্ষেত্রে একের পর এক অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বেরিয়ে আসছে। ঋণ বিতরণের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব গ্রাহকের নামে বিভিন্ন স্কিমের অনুকূলে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসবের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত ২৬ আগস্ট থেকে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার কাজ শুরু করে। এ সময় অর্থ লোপাটের ঘটনা ধরা পড়লে নিরীক্ষকদল ওই শাখায় ঋণ বিতরণের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শেখ মাহফুজুর রহমানের কাছে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে চায়। তখন তিনি তাঁর এক আত্মীয় মারা গেছে জানিয়ে গা ঢাকা দেন। সেই থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।