কেবল দেশে নয়, বাংলাদেশের নৌবাহিনী যাতে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে সরকার এ বাহিনীর আধুনিকায়ন করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (০৬ সেপ্টেম্বর) সকালে বাগেরহাটের মংলায় নেভাল বার্থ দিগরাজে বানৌজা কে জে আলী, বানৌজা সন্দ্বীপ ও বানৌজা হাতিয়ার কমিশানিং এবং নবনির্মিত ল্যান্ডিং ক্রাফট ট্যাংক (এলসিটি) ১০৩ ও ১০৫ এর সংযুক্তিকরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমরা এ অঞ্চলে কোনো যুদ্ধবিগ্রহ চাই না, আমরা চাই শান্তি।”
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশকে সমৃদ্ধিশালী করার জন্য নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের নৌবাহিনী শুধু দেশে নয়, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যে কোনো স্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে- এটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।”
দেশের জলসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌবাহিনীকে ‘দক্ষ, আধুনিক ও ভারসাম্যপূর্ণ একটি ত্রিমাত্রিক’ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দুটি সাবমেরিন সংযোজনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে, যা ২০১৬ এর মাঝামাঝি নৌবাহিনীতে সংযোজিত হবে।”
নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মনে রাখতে হবে, আমাদের যে সীমিত সম্পদ, তা দিয়ে নৌবাহিনীর মত একটি প্রযুক্তিনির্ভর ব্যয়বহুল বাহিনীকে যুগোপযোগী রাখার প্রয়াস অব্যাহত রাখতে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।”
সরকার প্রধান তার বক্তৃতায় বলেন, দেশের ৭২০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় প্রায় তিন কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহের জন্য সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি সমুদ্রপথেই পরিচালিত হয়। এ কারণে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা বিধান ‘অপরিহার্য’।
দেশের অধিকাংশ নাগরিক সমুদ্র সম্পদের গুরুত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট ‘সচেতন নয়’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের নৌবাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত লোকচক্ষুর অন্তরালে অনেক প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করছে।”
নৌবাহিনীতে নতুন যুক্ত হওয়া এই নৌযানগুলো দেশেই তৈরি হয়েছে। দুটি এলসিটি তৈরি হয়েছে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে। আর ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ইউটিলিটি বানৌজা সন্দ্বীপ ও বানৌজা হাতিয়া তৈরি হয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ডে।
ভবিষ্যতে দেশেই আরও উন্নতমানের যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
নৌবাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন। মেরিটাইম হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট, দুটি মিসাইল ফ্রিগেট, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি ফ্রিগেট, দুটি মিসাইল করভেট এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি পাঁচটি পেট্রোল ক্রাফট নৌবাহিনীতে সংযোজেন কথাও শেখ হাসিনা বক্তৃতায় বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি আরও একটি ফ্রিগেট এবং চীনে নির্মাণাধীন ‘অত্যাধুনিক’ দুটি করভেট চলতি বছরেই নৌবহরে সংযোজিত হওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
উপকূলীয় অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নজরদারি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোষ্টাল সার্ভেলেন্স স্টেশন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামো স্থাপনের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
অনুষ্ঠানে তিন বাহিনীর প্রধান উপস্থিত ছিলেন।