মংলা বন্দরের অ্যাংকোরেজ এলাকায় নয় মিটারের বেশি ড্রাফটসম্পন্ন জাহাজ চলাচল ও পশুর চ্যানেলের আউটার বার এলাকার নাব্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘পশুর চ্যানেল আউটার বারে ড্রেজিং’ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
৫৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০০৬ থেকে জুন ২০০৯ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য একনেক সভা অনুমোদন দিয়েছিল।
প্রকল্প অনুমোদনের পর ড্রেজিং কাজের জন্য ছয় বার দরপত্র আহ্বান করা হলেও কোনো দরপত্র জমা পড়েনি। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। ফলে সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জুন ২০১৫ পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি তিন লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় কোনো দরপত্র জমা না পড়ায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে কোনো অগ্রগতি না থাকায় প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি শেষ করতে ২০০৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় প্রকল্পটির সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। সভা প্রকল্পটি শেষ না করে বাস্তবতার নিরিখে সংশোধন করার নির্দেশ দেয়। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে আবারও সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
৫৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রকল্পে এখন ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ৩শ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন মেয়াদকাল বাড়ানো হয়েছে ২০১৭ সালের জুন নাগাদ।
নতুন করে আবারও প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করছে বলে সূত্রের খবর।
প্রকল্প প্রসঙ্গে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) হাওলাদার জাকির হোসেইন বলেন, বর্তমানে পশুর চ্যানেলের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ফলে আউটার বার এলাকায় অনেক পলি জমা পড়েছে। পলি জমার কারণে আউটার বার এলাকায় জাহাজ চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত নাব্যতা হারাচ্ছে। এর ফলে ড্রেজিংয়ের পরিমাণ ৫০ লাখ ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।
‘আমরা প্রকল্প নেওয়ার সময় যে পরিমাণ পলি অপসারণ করার চিন্তা করেছিলাম পরবর্তী সময়ে তার পরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে আমরা নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারিনি।’
বর্ধিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি, এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, আমরা আশা করছি এবার সঠিক সময়ে সবার সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারবো। এ প্রকল্পের সঙ্গে মন্ত্রণালয়সহ কিছু প্রযুক্তিগত কাজ জড়িত। আশা করছি, এবার প্রকল্পের সব কাজ শেষ হবে।
রূপসা ও পাকশি সেতু নির্মিত হওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন হয়েছে। এছাড়া পদ্মাসেতু ও খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ কাজ শেষ হলে মংলা বন্দরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অধ্যায় সূচিত হবে। এতে মংলা বন্দরের গুরুত্ব বহুলাংশে বেড়ে যাবে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, দেশের ঈশ্বরদী, সৈয়দপুর, মংলা ইপিজেড ও বন্দর এলাকায় বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হলে মংলা বন্দরের গুরুত্ব আরও বাড়বে।
এছাড়া, ভারত, নেপাল ও ভুটানের ট্রানজিট পণ্য মংলা বন্দরের মাধ্যমে পরিবাহিত হলে বন্দরে আগত জাহাজের সংখ্যাও বাড়বে। বাগেরহাট জেলায় রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ নির্মাণ করা হবে।
নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে বলে জানিয়েছে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় ৩১ দশমিক ৯৯ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের জন্য ৫৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ২০০৬ সালে অনুমোদিত প্রকল্পে প্রতি ঘনমিটার ড্রেজিং ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১শ ৮০ টাকা। সে সময় জ্বালানি তেলের প্রতি লিটারের মূল্য ছিল ১৯ দশমিক ৪৩ টাকা। ২০১৪ সালে জ্বালানি তেলের প্রতি লিটার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬৮ টাকা। এ কারণে সঠিক সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি।