বাগেরহাটের মংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও সুন্দরবন সংলগ্ন লাউডোব এলাকা থেকে দু’টি তক্ষক উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড।
উদ্ধারকৃত তক্ষক দু’টি মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুপুরে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে অবমুক্ত করা হয়েছে।
মংলাস্থ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার এটিএম রেজাউল হাসান জানান, বন্য প্রাণী পাচারকারী একটি চক্র তক্ষক পাচার করছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে মংলা ইপিজেড ও সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার দাকোপ উপজেলার লাউডোব এলাকায় অভিযান চালায় কোস্টগার্ড। এসময় ওই দুই এলাকা থেকে পাচারের উদেশ্যে রাখা ২টি কক্ষক উদ্ধার করে কোস্টগার্ড সদস্যরা।
তবে কোস্টগার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
উদ্ধার হওয়া তক্ষক দু’টি সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও লালন পালন কেন্দ্রে অবমুক্ত উদ্ধার করা হয়েছে।
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা ও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় জানান, উদ্ধার হওয়া তক্ষক দু’টি বনবিভাগের কাছে হস্তান্তরের পর কোস্টগার্ডের উপস্থিতিতে তা এই কেন্দ্রে অবমুক্ত করা হয়।
এসময় কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার এটিএম রেজাউল হাসান, অপারেশন অফিসার এ এম রাহাতুজ্জামান, সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ ও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
| কি এই তক্ষক ?
তক্ষক (Gecko) Lacertilia বর্গের Gekkonidae গোত্রের একটি গিরগিটি প্রজাতি। দেখতে টিকটিকির আকৃতির হলেও আকারে কিছুটা বড় হয় এই প্রাণীটি।
পিঠের দিক ধূসর, নীলচে-ধূসর বা নীলচে বেগুনি-ধূসর। সারা শরীরে থাকে লাল ও সাদাটে ধূসর ফোঁটা। পিঠের সাদাটে ফোঁটাগুলি পাশাপাশি ৭-৮টি সরু সারিতে বিন্যস্ত।
কমবয়সী তক্ষকের লেজে পরপর গাঢ-নীল ও প্রায় সাদা রঙের বলয় রয়েছে। মাথা অপেক্ষাকৃত বড়, নাকের ডগা চোখা ও ভোঁতা। চোখ বড় বড়, মণি ফালি গড়নের। লেজ সামান্য নোয়ানো। দৈর্ঘ্য নাকের ডগা থেকে পা পর্যন্ত ১৭ সেমি এবং লেজও প্রায় ততটা।
তক্ষকের ডাক চড়া, স্পষ্ট ও অনেক দূর থেকে শোনা যায়। সতন্ত্র শব্দে ডাকের কারণে ‘প্রকৃতির ঘড়ি’ হিসেবেও পরিচিত তক্ষক।
ডাকের জন্যই প্রাণীটির এই নাম। ‘কক্কক্’ আওয়াজ দিয়ে ডাক শুরু হয়, অতঃপর ‘তক্-ক্কা’ ডাকে কয়েক বার ও স্পষ্টস্বরে। এরা কীটপতঙ্গ, ঘরে থাক টিকটিকি ছোট পাখি ও ছোট সাপ খেয়ে থাকে। ছাদের পাশের ভাঙা ফাঁক-ফোঁকড় বা গর্তে অথবা গাছে বাস করে।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কাম্পুচিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬০০ প্রজাতির তক্ষকের বাস।
ব্যাপক নিধন আর পাচারের কারণে আজ এই প্রাণীটি বিপন্ন প্রায়। অনেকে ভুলক্রমে তক্ষককে বিষাক্ত সরীসৃপ হিসেবে চিহ্নিত করে। দেশী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় তক্ষতের তেল।
একবিংশ শতাব্দির এ যুগে এসেও প্রকৃতির ঘড়ি তক্ষক নিয়ে রীতিমতোন হৈ-চৈ পড়ে গ্রাম-গঞ্জে। কথিত আছে, এক একটি তক্ষকের মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।
এক সময় বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলত তক্ষক নামের এই প্রাণীটি। স্থানীয় ভাষায় ‘তোককেত’ না যার বেশি পরিচিতি।
বিগত দিনেও বাগেরহাটে বেশ কয়েক বার তক্ষক নামের এই প্রাণীটি আটকের ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র মনে, এক সময় ম্যাগনেটের পিছু ছুটে অসংখ্য মানুষ তার সর্বস্ব হারিয়েছে। আর এখন ছুটছে তক্ষক বা তোককেতের পিছনে।