নাম সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ। শিক্ষকতার জন্য এক সময় পরিচিতি পান সিরাজ ‘মাস্টার’ নামে। কিন্তু একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিচিতি হয় নতুন নামে, ‘কসাই’ সিরাজ হিসাবে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া গ্রামের মৃত হারেজউদ্দিন শেখ ও সালেহা বেগমের ছেলে শেখ সিরাজুল হক সিরাজ।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেয়নেট দিয়ে গলা কেটে বহু মানুষকে হত্যার কারণে তার নাম হয় ‘কসাই সিরাজ’।
১৯৪২ সালে জন্ম নেয়া সিরাজ বিএ পাস করার পর বাগেরহাটের সায়েড়া মধুদিয়া কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে তিনি খুলনার মাল্টিলেটারাল হাই স্কুলে যোগ দেন এবং মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত সেখানেই চাকরি করেন।
মামলার নথি অনুযায়ী, মুসলীম লীগের ছাত্র সংগঠন ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশন বা এনএসএফ-এর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে আসা সিরাজ পরে মূল দলেও সক্রিয় হন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন এবং ওই সশস্ত্র বাহিনীর বাগেরহাট অঞ্চলের উপ প্রধানের দায়িত্ব পান। জেলার বিভিন্ন স্থানে রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধে অংশ নেন তিনি।
গণমাধ্যমে আসা তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের সময় সিরাজ মাস্টার রাজাকার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির একেএম ইউসুফের ‘বাঁ হাত’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইউসুফ মামলার বিচার চলাকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তার নৃশংসতা এতবেশি ছিলে যে, দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ধরে লোহার খাঁচায় বন্দি করেন। এ সময় বাগেরহাট শহরের বাগেরহাট স্কুল মাঠে আলোচিত সিরাজকে দেখার প্রদর্শনী করা হয়। খবর পেয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু মানুষ তাকে দেখতে আসে। পরে দীর্ঘদিন তিনি কারাগারে ছিলেন।
২৫ পয়সায় টিকিট কিনে দেখতে আসেন সবাই। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর এক সময় মুক্তি পান তিনি। তবে আর নিজ গ্রামে ফিরতে পারেননি।
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে চলে আসেন বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে। সেখানে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস শুরু করেন।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ ছাড়া অপর আসামি খান আকরাম হোসেনের আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।