একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বাগেরহাটের আব্দুল লতিফ তালুকদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) রাত ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবন মেডিসিন ওয়ার্ডে তিনি মারা যান।
শারীরিক অসুস্থতার জন্য ২৩ জুলাই তাকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
হাসপাতালে দায়িত্বরত কারারক্ষীরা আব্দুল লতিফ তালুকদারের (হাজতি নম্বর ২১৮৭৪/১৫) মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
লতিফ তালুকদারের ছেলে মো. হৃদয় জানান, ট্রাইব্যুনাল-১ এর আমার বাবার বিরুদ্ধে মামলা চলছিল। দীর্ঘ দিন থেকে তিনি শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছিলেন।
গত বছরের ৫ নভেম্বর রাজাকার কমান্ডার ‘বাগেরহাটের কসাই’ বলে কুখ্যাত সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার এবং তার দুই সহযোগী আব্দুল লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খাঁনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোট সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
তাদের মধ্যে সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং আব্দুল লতিফ ও খান আকরামের বিরুদ্ধে ৩টি করে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের শাঁখারিকাঠি বাজার, রনজিৎপুর, ডাকরা ও কান্দাপাড়া গণহত্যাসহ ৮ শতাধিক মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন এবং শতাধিক বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।
গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিসে প্রসিকিউটর সাইয়্যেদুল হক সুমন ও শেখ মুশফিক কবির তাদের বিরুদ্ধে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।
তদন্ত চূড়ান্ত করে গত বছরের ২৫ আগস্ট এ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন বরাবর দাখিল করেন তদন্ত সংস্থা। তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত দল দীর্ঘ তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে এ চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রসিকিউশন এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।
গত ২৩ জুন বিচারিক কার্যক্রম শেষে আবদুল লতিফসহ বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলার রায় অপেক্ষামান রাখেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুানাল-১।
বাগেরহাটের এই তিন আসামির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ ৯টি ভলিউমে ৫ খণ্ডে কেস ডায়েরি করে অভিযোগ দাখিল করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ৯টি খণ্ডে মোট ৮শ’ ৪৪ পৃষ্ঠার তদন্তের ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ৬৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন তদন্ত সংস্থা।
ট্রাইব্যুনাল-১ গত বছরের ১০ জুন এ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ১১ জুন আব্দুল লতিফ তালুকদার, ১৯ জুন আকরাম হোসেন খাঁন ও ২১ জুলাই সিরাজ মাস্টারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।