বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫/১ পোল্ডারের আওতায় নির্মিত ২০টি স্লুইস গেট এখন এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী পানি উঠানো কিংবা নামানো সম্ভব না হওয়ায় চলতি আমন চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে সিডর-আইলায় বিপর্যস্থ উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলার কৃষিনির্ভর মানুষের জীবন-জীবিকা কঠিন হয়ে উঠবে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের মতে, উপজেলার চার দিক দিয়ে বেষ্টিত পাউবো’র ৩৫/১ পোল্ডারে (বেড়িবাঁধে) ছোট-বড় ২০টির মতো স্লুইস গেট রয়েছে।রক্ষণাবেক্ষণসহ দীর্ঘদিন সংষ্কারের অভাবে এগুলো অকেজ হয়ে পড়ে। ফলে প্রযোজন মতোন পানি উঠানো বা নামানো যাচ্ছিল না।
উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলার কয়েক হাজার চাষির ফসল রক্ষার কথা বিবেচনা করে ১৯৮৪ সালে বলেশ্বর ও ভোলা নদীর সাথে সংযুক্ত খালে বাঁধ নির্মান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তখনকার সময় বাঁধটি এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য আর্শিবাদ হলেও বর্তমানে সেগুলো চাষীদের কাছে অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাঁধ ও গেট গুলোর কোনটাই উপকারে আসছে না কৃষকদের।
বাগেরহাটের পাউবোর তথ্য মতে, ৩০ বছর পূর্বে পানি উনয়ন্ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের আওতায় নির্মিত ছোট-বড় ২০টি স্লুইজ গেট (জলকপাট) দীর্ঘদিন সংষ্কারের অভাবে অকেজ হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ন স্লুইজ গেট গুলো দিয়ে পানি উঠানো-নামান যাচ্ছে না। এতে ফসলি জমিতে চাষাবাদও ব্যাহত হচ্ছিল।
এ অবস্থায় পাউবো ২০১৪ সালে জরুরী ভিত্তিকে শরনখোলার মূল স্লুইজ গেটটি মেরামতে উদ্যোগ নেয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ কাজের জন্য ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্ধও দেয়া হয়।
কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস প্রসারনী এন্টারপ্রাইজ মূল স্লুইজ গেটটি মেরামতের ৫৫ লাখ টাকার অধিকাংশই লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রভাবশালী এক যুবলীগ নেতার মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করাতে গিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির ও অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়। স্লুইজ গেট দিয়ে পানি উঠানামার মূল জকপাটের কাজ না করেই অতি জন গুরুত্বপূর্ন এই গেটটি দায়সারা মেরামত করায় মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে।
তাই বর্ষা মৌসুমে মূল এই স্লুইজ গেট কোন কাজে না আশায় তা এখন শরণখোলার হাজার হাজার কৃষকের মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। পানি অপসারণ না হওয়ায় উপজেলার আমন চাষিদের মাঝে হাহাকার শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ক্ষভ ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলার খাদা এলাকার বাসিন্দা কৃষক সুলতান তালুকদার বলেন, উপজেলা সদরের বান্দাঘাটা এলাকার মূল স্লুইজ গেটটি মেরামতের পরেও নষ্ট থাকায় তা দিয়ে মোটেই পানি অপসারণ হচ্ছেনা। অনেক এলাকার কৃষকরা ঠিক মতোন আমানের বীজ তলা করতে পারেনি।
ধানসাগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ শাজাহান দুলাল বলেন, অতিরিক্ত পানির কারনে তার ইউনিয়নে চাষাবাদ বন্ধ রেখেছে কৃষকরা। এ ছাড়া ১৯৮০ দশকে নির্মিত বলেশ্বর নদীর সংযোগ খালের মূল বাঁধ ও পাউবোর নির্মিত স্লুইজ গেট গুলো এখন কৃষকদের কাছে অভিশাপ। যার ফলে বৃষ্টির পানি আটকে গিয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশংকা করা হচ্ছে।
কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার বলেন, চলতি আমন মৌসুমে চাষাবাদের জন্য উপজেলার ১১ হাজার চাষি প্রায় ১২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি শুরু করছেন। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের ফলে পানির নিচে থাকায় আমন চাষাবাদ ব্যাহত হতে পারে।
স্লুইজ গেট সমস্যার বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এরই মধ্যে অবহিত করা হয়েছে।
উপজেলা সদরের রায়েন্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জাম মিলন বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য মূল গেটটি মেরামতে ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু মেরামত কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক বাগেরহাট যুব দলের সাবেক সভাপতি তারেক আলী মিঠু স্থানীয় যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে কাজটি করতে গিয়ে ব্যাপক দুর্নিতির ও অনিয়মের আশ্রয় নেয়। ফলে অধিকাংশ অর্থ লুটপাট হওয়ায় মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে।
যে কারনে স্লুইজ গেটটি কৃষকদের কোন উপকার হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটার সৈয়ত তারিক আলী মিঠু মুঠোফোনে এ বিষয় কোন কথা বলতে রাজি হননি।
এব্যাপারে বাগেরহাটের পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাইনুদ্দিন বলেন, স্লুইজ গেট মেরামতের কাজে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে খোঁজ খবর নিয়ে প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে খুব শিগ্রই শুরু হতে যাওয়া ৪৮৭ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কৃষকদের দুঃখ দূরদশার লাঘপ হবে বলে দাবি করেন তিনি ।