প্রচ্ছদ / খবর / বাগেরহাটে পাউবো’র বাঁধে ভাঙন, এলাকাবাসী আতঙ্কে

বাগেরহাটে পাউবো’র বাঁধে ভাঙন, এলাকাবাসী আতঙ্কে

Bagerhat-ShoronKhola-Pic-21-07-15টানা বর্ষণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগেরহাট সদর ও শরণখোলা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দু’টি বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।  

শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নে পাউবো’র ৩৫/১ পোল্ডার এবং সদর উপজেলার নাজিরপুর প্রকল্পের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কুলিয়ারদাইড় এলাকার মোট ১০টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভাঙনের কবলে পড়েছে।

ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু না হলে সাউথখালী ও বাগেরহাট সদরের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কমপক্ষে ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, ভাঙন ও প্লাবন থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারা বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে মেরামতের কাজ করেছে।

কুলিয়ারদাইড় গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল সামাদ খান (৮৫) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ভৈরব নদীর ভাঙনে গত ২০ বছরে তার প্রায় ২০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই এলাকায় তিন দফা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে।

চলতি বর্ষা মৌসুমে আবারো বাঁধটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। যেকোন মুহূর্তে বাঁধের কুলিয়ারদাইড় অংশ নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। এতে শেষ সম্বল বসত বাড়ি ও পানের বরজটি হারাবার শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

Bagerhat-Pic-1(27-07-2015)একই গ্রামের রাজ্জাক পাইক (৬৫) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, নাজিরপুর প্রকল্পের ভাঙনের মুখে পড়া বাঁধের এই অংশে মাত্র ১২ দিন আগে পাইলিং এর কাজ হয়েছে। কিন্তু দুই সপ্তাহ না পেরুতেই শনিবার (২৫ জুলাই) রাতে জোয়ারের সময় বাঁধটির দু’টি অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে যেকোন মুহূর্তে বাকি অংশ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাঁধা রক্ষায় পাউবোর জরুরি ভিত্তিতে গাছের বল্লি দিয়ে পাইলিং এর কাজ ঠিকাদার সঠিকভাবে না করায় এমন অবস্থা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বাঁধ সংলগ্ন এলাকার পান চাষি অলক কুমার সেন (৪৫) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বাঁধ রক্ষায় পাইলিং কাজ হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ এলাকায় আসেনি। ঠিকাদার দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কাজ শেষ করেছেন। কয়েক দফা পানি উন্নয়ন বোর্ডে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিতা হক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ভাঙন ঠেকাতে এখনই জরুরি ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ইউনিয়নের কুলিয়ারদাইড়, বিষ্ণুপুর সহ চারটি গ্রাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে এসব এলাকার কয়েক হাজার বসতবাড়ি, মাছের ঘের ও পানের বরজ ভেসে যাবে।

তিনি বলেন, বাঁধটি রক্ষায় রোববার (২৬ জুলাই) দিনভর মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে এবং গাছের বল্লি দিয়ে এলাকার ৭০ থেকে ৮০ জন মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করেছেন। কয়েক বার খবর দেওয়া হলেও পাউবোর কর্মকর্তা বা কোনো জন প্রতিনিধি এলাকায় আসেননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

এতে ওই চার গ্রামের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে বাঁধটি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নে পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারে তিনটি স্থানে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকার বেড়িবাঁধের একদিকে ধসে গেছে। আরো কয়েকটি স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। যেকোন সময় বাঁধটি ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইন উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, আমাদের কর্মকর্তারা সার্বক্ষনিক ভাঙন কবলিত ওইসব এলাকায় নজর রাখছে। ৩৫/১ পোল্ডারে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।

এছাড়া, নাজিরপুর প্রকল্পে কুলিয়ারদাইড় এলাকায় ভাঙনের মুখে পড়া বাঁধটি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

২৭ জুলাই :: স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এস/আইএইচ/এনআরএ/বিআই

About বাগেরহাট ইনফো নিউজ