পলি জমে নদী-খাল ভরাট, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও অবৈধ দখলের কারনে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বৃষ্টির পানি নামতে না পেরে এলাকায় দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।
সরেজমিনে উপজেলার টাউন নওয়াপাড়া, শ্যাম্বাগাতসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও যোগীখালী নদী খননে অনিয়মের ফলে একটানা অবিরাম বৃষ্টিতে পিলজংগ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ভয়াবহ জলাবন্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ ঘরবাড়িতে পানি উঠে কৃষি ও মৎস্য চাষিসহ সহস্রাধীক সাধারণ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
শ্যামবাগাত গ্রামের আবু বক্কার (৮০) অভিযোগ করে বলেন, “মুনস্টার জুট মিলসহ ওই কম্পানির (গ্রুপের) কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের রাখা বালিতে খাল বন্দ হয়ে আছে। আমার বয়সে আমি কখনো এই গ্রামে এত পানি উঠতে দেখিনি।
পানি নিস্কাশনের জন্য ঐ কম্পানির এক কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি বলেন, “লক্ষ লক্ষ টাকার বালি সরিয়ে পানি সরবরাহ করা সম্ভব নয়”।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক ভুক্তোভোগীরা জানান, খাল ভরাট করে শ্যামবাগাত এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মান করা হলেও মিথ্যা মামলার ভয়ে তারা প্রতিবাদ করতে পারে না। ঘরের চারপাশে পানিতে প্লাবিত হওয়ায় রহিমা বেগম তার ২ বছরের শিশুকে ঘরের খুটিতে বেধে রেখে পানি থেকে সন্তানের শুরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন।
এছাড়াও কাটাখালী এলাকায় দু’টি খালের জায়গা দখল করে মার্কেট ও দোকান মির্মানের ফলে পার্শ্ববর্তী বাগেরহাট সদর উপজেলাসহ ৯টি গ্রামের পানি নিস্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। যোগী খালী নদী খননের মাটিতে পার্শ্ব খাল ভরাট হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে ৩টি গ্রামের প্রায় ৩শত হেক্টর কৃষি জমিতে আমন মৌশুমে ফসল উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানিয় কৃষক আসাদ বলেন, পানের বরজ, সবজির ক্ষেত ও ধানের বীজতলা পানিতে ডুবে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।
হুমায়ুন কবিরসহ স্থানিয় মৎস্য চাষিরা জানান, বৃষ্টির পানির সাথে জোয়ারের পানিতে অনেকের ঘের তলিয়ে গেছে। এছাড়া যা দু’একটি নেটজাল দিয়ে রক্ষা পেয়েছে তা অতি দ্রুত পানি নিস্কাশন না হলে তলিয়ে যাবে। এর ফলে এ এলাকার শত শত মৎস্য চাষি পথে বসবেন।
অন্যদিকে ভৈরব নদী দীর্ঘদিন যাবৎ খনন না হওয়ায় অবৈধ দখলের ফলে প্রবল বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ফকিরহাট সদর. মুলঘর, নলধা মৌভোগ, বাহিরদিয়া ইউনিয়নের শত শত পরিবার পানি বন্ধি হয়ে রয়েছে। এ এলাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও রয়েছে পানিতে নিমজ্জিত।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাহার হোসেন জানান, প্রায় ১০ হেক্টর জমির বীজ তলা পানিতে ক্ষতি হয়েছে। অতিদ্রুত পানি না কমলে প্রায় ৩হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
পিলজংগ ইউপি চেয়ারম্যান খান শামিম জামান পলাশ জানান, কিছু অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে নদীখান ভরাট হয়েছে। যা উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহববুর রহমান বলেন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কল্পে প্রস্তুতি চলছে অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে যোগী খালী নদী পূন খনন কালে পানিউন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা আমাদের সাথে সমন্বয় না করায় পিলজংগ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের পানি নিস্কাশনে ব্যপক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসি জানান, উপজেলা সার্ভেয়ার নদী খননের স্থান নির্ধারন করলেও পাার্শ্ব খালের সংযোগ স্থান নির্ধারন না করায় তাদের পানিবন্ধি হতে হয়েছে। দ্রুত ভৈরব নদী ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খাল পূনঃ খনন ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলাবাসি।