উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট মৌসুমী লঘুচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। বৈরি আবহাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে মংলা বন্দরে পণ্য বোঝাই ও খালাসের কাজ।
মংলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সমূহকে ০৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে, বৈরি আবহাওয়ার করণে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া শত শত ট্রলার আশ্রয় নিয়েছে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় বিভিন্ন নদী ও খালে।
আবহাওয়া দপ্তরের এক সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে সাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এজন্য উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে ।
বুধবার (০৮ জুলাই) ভোর থেকে মংলাসহ আশপাশ উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে দমকাসহ ঝড়ো হাওয়ার সাথে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মংলা বন্দরের জেটি, পশুর চ্যানেল ও বহিনঙ্গরে অবস্থানরত সকল দেশী-বিদেশী জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাপন।
বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় বাগেরহাটের মংলায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক জনগোষ্ঠি। তলিয়ে গেছে মংলা শহরের অধিকাংশ আবাসিক এলাকা।
পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, শহরের মধ্যে তিনটি খালে স্লুইস গেট নির্মাণ ও ড্রেনের মুখ বন্ধ থাকায় বৃষ্টির পানি নামতে না পেরে এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। শহরতলীর নিম্মাঞ্চলসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বসত বাড়ী ঘরে পানিতে থৈ থৈ করছে।
কোন কোন এলাকার পানি ঢুকে পড়েছে বসত ঘরের মধ্যেও। ফলে পানি বন্দি হাজার হাজার পরিবারের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিপাত ও জলবদ্ধতার কারণে খেটে খাওয়া দরিদ্র লোকজন কাজে যেতে না পারায় তাদের মাঝে চাল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
শহরের কুমারখালী, ঠাকুর রানী ও কাইনমারী খালে স্লুইস গেট নির্মাণ কাজ চলার ফলে খালের উপর বাঁধ দিয়ে রাখা হয়েছে। এতে বৃষ্টিতে জমা হওয়া পৌর এলাকার পানি নিস্কাশন হতে পারছে না। বাঁধের মধ্যে ছোট আকারে পাইপ দেয়া হলেও তা দিয়ে পানি নামতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন সড়ক নির্মাণ কাজ চলায় অধিকাংশ ড্রেন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ কারণেও বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না।
অপরদিকে পৌর সভার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় এখন পর্যন্ত কোন ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। এসব এলাকায় জমা হওয়া বৃষ্টির পানি কোন অবস্থাতেই নিস্কাশন হতে পারছে না। শহরতলীর শেলাবুনিয়া, কুমারখালী, মিয়া পাড়া, জয় বাংলা, চরকানা, সিগনাল টাওয়ার, পূর্ব কবরস্থান রোডসহ অধিকাংশ আবাসিক এলাকার মানুষ পানি বন্দি হয়ে অবর্ণণীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
অনেক এলাকার রাস্তা ঘাট পানিতে ডুবে থাকায় পথচারিসহ যানবাহন চালকরা অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। আবাসিক এলাকার পুকুর, বাড়ির ওঠানসহ সব কিছু পানিতে ডুবে রয়েছে। রান্না করার জায়গা পর্যন্ত নেই অনেক জায়গাতে।
গৃহ পালিত পশু ও হাঁস মুরগী নিয়ে পরিবারের ভোগান্তি শেষ থাকছে না। বুধবার দিনভর ভূক্তভোগী পৌরবাসীকে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পৌর কার্যালয়ে ধর্ণা দিতে দেখা গেছে।
ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে পানি নিস্কাশনের আবেদন নিবেদন জানিয়েও কোন সাড়া পাচ্ছে না। অনেক ওয়ার্ড কাউন্সিলকেই খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
এ দিকে পানি জমে থেকে জলাবদ্ধতা স্থায়ী আকারে রূপ নেয়ায় অধিকাংশ এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটছে। এসব এলাকায় ইতিমধ্যে নানা রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে মংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র জুলফিকার আলী বলেন, পানি নিস্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পানি নামানোর জন্য পাইপ বসিয়ে এবং ড্রেন কেটে জলাবদ্ধ এলকা থেকে পানি সরোনোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আলী প্রিন্স জানান, টানা বৃষ্টিপাত ও বৃষ্টির পানিতে এলাকা বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় দরিদ্র লোকজন কাজ কর্ম করতে পারছে না। তাই পানি বন্দী গরীব লোকজনের মধ্যে ইতিমধ্যে ৫ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
আরো ত্রাণ সহায়তা প্রদাণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই তা দ্রুত দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।