ভৈরব নদীর ভাঙনে যাত্রাপুর বাজার সংলগ্ন মুচিঘাট এলাকায় বাগেরহাট-রুপসা পুরাতন সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে এক কিলোমিটার এলাকার মানুষ।
এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে সড়ক রক্ষায় ২০১৪ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বালুর বস্তা দিয়ে তৈরি অস্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ।
এখনই ব্যবস্থা না নিলে সড়কটি নদীগর্ভে বিলীনের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র ফকিরহাট ও যাত্রাপুরের সাথে বাগেরহাট সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
বুধবার (০৮ জুলাই) সরেজমিনে বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ও বারুইপাড়া ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এ চিত্র।
চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে আবারো ভাঙনের মুখে পড়ে সড়ক ও জনপথের আওতাধীন রূপসা-বাগেরহাট পুরাতন সড়কটি। টানা বর্ষণে ভাঙন কবলিত সড়কটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মাত্র দুই তিন ফুট ভেঙে গেলে মুল সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয়রা জানায়, মুচিঘাট থেকে যাত্রাপুর পর্যন্ত আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনের প্রকপ দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর, চাপাতলা, চাপাতলা পূর্বপাড়া, লাউপালাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের দিন কাটছে আতঙ্কে।
ভৈরবের এ ভাঙন রোধে এবং সড়কটি রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তাদের।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় আব্দুল মালেক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ভৈরব নদীর অব্যাহত ভাঙনে গত কয়েক বছরের পৈত্রিক সম্পত্তি শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে সড়কের পাশে একটি জায়গায় বসবাস করছি। এতেও আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেকোন সময় সবকিছু হারাতে হবে। আমরা এখন যাব কোথায়?
লাউপালা গ্রামের ব্যবসায়ী এস এম আব্দুল্লাহ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আমার ৯৬ শতাংশ জমি ছিল। গত কয়েক বছরের ভাঙনে বেশিরভাগ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন রয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, এবার ভাঙনের যা অবস্থা তাতে যেকোন সময় বাকি জমিটুকু নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। ছেলে মেয়ে নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব?
মালেক এবং আব্দুল্লার মতোন নদী ভাঙনের শিকার তুষার ভট্ট, সুশঙ্কর ভাস্কার, আব্দুল বাচ্চু বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, প্রতি বোছর (বছর) বর্ষা আসলিই (মৌসুমে) ভাঙ্গন আতঙ্কে থাহি (থাকি)। আমরা এহন কোথায় যাব? সরকার কি আমাগো জন্যে কোন ব্যবস্থা নেবেনা।
পুরাতন রূপসা-বাগেরহাট সড়কের গাড়ি চালক আব্দুল সালাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এ সড়কে গাড়ি চালাই। কিন্তু যে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে দুই একদিনের মধ্যে এ সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। সড়কটি বিলীন হলে এ পথে আমাদের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বে যানবাহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শত শত চালক ও শ্রমিক।
যাত্রাপুর ইউনিয়নে সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর নাজমা বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভৈরব নদের ভাঙনে এই এলাকার শত শত বাড়ি-ঘর, পানের বরজ, কারখানা, গাছ-পালা বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
চলতি বর্ষা মৌসুমে আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে যেকোন সময় এখানকার সড়কসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাবে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, জেলা সদরের সঙ্গে রূপসার এই পুরাতন সড়কটি দিয়ে ঢাকাগামী পরিবহনসহ প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের সহস্রাধিক যানবাহন চলাচল করে।
ভাঙনের কারণে বর্তমানে সড়কটির যে অবস্থা -এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হবে। এতে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ এই অঞ্চলের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মইনউদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ভাঙনরোধে ২০১৪ সালে ওই এলাকায় বালুর বস্তা ফেলে অস্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ করা হয়। কিন্তু বছর না যেতেই আবারো সেখানে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে সড়ক সংলগ্ন এক কিলোমিটার এলাকা রক্ষায় একটি স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ জরুরি।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে, সড়কটি রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি