খনন কাজ শেষের আগেই মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী দাউদখালী নদীর গোড়ায় দেওয়া বাঁধ কেটে লবণ পানি ঢুকানো হয়েছে। ফলে নদী ও খাল খনন কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বাঁধ কেটে দেওয়া এবং বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়াতে নদী ও খাল খনন শেষ হওয়ার আগেই কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হতে পারে। এদিকে, দাউদখালীসহ নদী-খাল খনন কাজ ব্যহত হলে মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌপথেও এর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, দীর্ঘ দিনের বন্ধ থাকা মংলা বন্দরের আন্তর্জাতিক নৌ-পথ মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ভরাট হয়ে যাওয়া দাউদখালী নদীতে খনন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। চলতি বছরের ঘষিয়াখালী চ্যানেল সংলগ্ন রামপালের দাউদখালী নদী খনন শুরু।
১৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন ৩৪/২ পোল্ডার প্রকল্পের আওতায় ১৭ নদী-খাল খনন কাজের অংশ হিসেবে দাউদখালী নদী খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) মাতে, মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-পথের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী রামপাল অংশে কুমারখালী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত দাউদখালী নদী খনন সম্পন্ন হলে আন্তর্জাতিক ঐ নৌ-পথটি আরো কার্যকর হয়ে উঠবে।
পাউবোর হাতে নেওয়া খনন কাজ সফল না হলে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষার সাথে দাউদখালী নদী খননে আগ্রহী বিআইডব্লিউটিএ কর্তপক্ষ। সাম্প্রতি আন্তর্জাতিক ঐ নৌ-পথটি খনন কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ-এর এক কর্মকর্তা এমন কথাই জানান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে।
দাউদখালী নদী খনন কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মোক্তার হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ইতোমধ্য নদীর খনন কাজ প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। তবে গোড়ার দিকে প্রায় ১ কিলোমিটার অংশের কাজ পুরোপুরি হয় নি।
নানা প্রতিবন্ধকতার দোহাই দিয়ে তিনি বলেন, সার্বিক ভাবে নদী কাটা খারাপ হয়নি। পুরো ১৫ কিঃমিঃ নদী ইতোমধ্য ইস্কুবেটর মেশিনের সাহায্যে খনন প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। এরই মধ্য গত ১৮ তারিখ রাতে নদীর গোড়ায় দেওয়া বাঁধ কেটে দেওয়ায় অনেকা অসমাপ্ত রেখেই খনন কাজের সমাপ্তি টানতে হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক ওয়ার্ক এ্যসিস্টেন্স বলেন, বাঁধের আশে পাশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন থাকলে বাঁধ কাটার সময় তারা কেন টের পাবেন না এটি সংশয়ের।
স্থানীয়ভাবে অভিযোগ আছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনের সাথে এলাকার কিছু ঘের মালিকের মধ্য সমঝোতার মাধ্যমে পরিকল্পিত ভাবে এই বাঁধ কাটা হয়েছে। কারণ ঘের মালিকরা ঘেরে লবন পানি উঠাতে না পারায় সময়মত তারা চিংড়ি চাষে মার খাচ্ছে।
তাদের কারণেই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ৩৪/২ পোল্ডারের কাজ বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রামপালের স্থানীয় সংবাদকর্মী এম এ সবুর রানা জানান, পাউবো খনন কাজ আগে নদীর গোড়ার অংশ থেকে শুরু না করে উপরের দিকে শুরু করে। এখন বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় নদীর গোড়া থেকে প্রায় ২ কিঃমিঃ পুরোপুরি খনন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া এখন বর্ষার সময় ইস্কুবেটর মেশিনও চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
নদীর গোড়া থেকে ২ কিঃমিঃ নদী পথ ৬০ মিটার চওড়া করে খনন করার কথা থাকলেও তা ৩৫ থেকে ৪০ মিটার চওড়া করে কাটা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কে বা কারা বাঁধ কেটে দিয়েছে। এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাকে এবং থানায় বিষয়টি জানিয়েছে।
তবে পুনরায় বাঁধ মেরামত করে নদী খননের কাজ করা হবে কিনা এবিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।
অপর দিকে ফয়লা স্লুইজ গেট থেকে হু হু করে গেট অভ্যান্তরে তীব্র লবন পানি ঢোকায় হাজার হাজার চাষি সঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কারণ এই এলাকায় প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ মন পর্যন্ত বোরো ধান উৎপাদন হচ্ছে।
তীব্র লবন পানি জমিতে প্রবেশ করলে বোরো চাষ একে বারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, বলে চাষিদের দাবি।
মোক্তার হোসেন জানান, এখন বর্ষার সময় ইস্কুবেটর মেশিনও চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। আপাতত বাঁধ মেরামতের কোন পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি।
দাউদখালী নদীতে পানির প্রবাহ না বাড়লে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-চ্যানেল বাঁচিয়ে রাখা কঠিন বলে মনে করেন বিআইডব্লিউটিএ-এর প্রকৌশলী এ এইচ এমন ফরহাদুজ্জামানা।