‘কেবল বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারই নয়, কোনো বুর্জোয়া সরকারই জনগণের সেবক নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বন্দর-বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. শহিদুল্লাহ।
শুক্রবার (২৯ মে) বিকেলে বাগেরহাটের হযরত খান জাহান (রহ.) এর মাজার সংলগ্ন ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে এক সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের জনগণের সেবক তারা (কোন সরকার) কেউ না। তারা প্রত্যেকেই ধনী শ্রেণীর সেবক, বুর্জোয়াদের সেবক, ভারতের সেবক, সাম্রাজ্যবাদের সেবক। আমাদের জনগণের সেবক তারা কেউই নয়।
সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেওয়া নিজের সন্তানকে হত্যা করার মতোই পাপ হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রকৌশলী শেখ মো. শহিদুল্লাহ।
এ প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন রাখেন আমাদের স্বার্থ নষ্ট করে সরকার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা কার স্বার্থে (?)। সুন্দরবন আমাদের সম্পদ। আমাদের সম্পদ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে, এ সরকার জনগণের সেবক নয়।
সুন্দরবন ধ্বংসের মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজেদের বিপদ ডেকে আনার মতো আত্মঘাতী প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেব না। এই তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পে সরকার জনগণের স্বার্ধ নষ্ট করে আমাদের বিদ্যুৎ খাতকে ভারতের বুর্জোয়াদের হাতে তুলে দিতে চায়।
প্রকৌশলী শেখ শহিদুল্লাহ আরো বলেন, সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে করার উদ্যোগ নেওয়ায় এরই মধ্যে নরওয়ে সরকার ভারতের এনটিপিসি (NTPC) কোম্পানিতে সব বিনিয়েগ প্রত্যাহার করেছে। অন্য দেশের সরকার সুন্দরবন ধ্বংসে বিনিয়েগ করায় ভারতের কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও আমাদের সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এটা আমাদের চরম লজ্জার।
সুন্দরবন সংলগ্ন রামপাল ও ওরিয়ন তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল এবং সুন্দরবন-প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ ও কৃষি রক্ষায় ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের নির্ধারিত এ সমাবেশ বাগেরহাট শহরের পুরাতন কোর্ট চত্ত্বরে হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনের বাধা এবং অনুমতি না পাওয়ায় পরে মাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, সুন্দরবনের পাশে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে বাংলাদেশের জনগণকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আগামী কয়েকশ’ বছর এ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষতির ভার বহন করতে হবে। দেশর বর্তমানের স্বার্থে ভবিষ্যতের স্বার্থে কোনো ভাবেই আমারা এই প্রকল্প হতে দিতে পারিনা।
সরকার বলে এই প্রকল্প ভালো। যদি ভালোই হয় তবে আমাদের কথা বলতে দিতে অসুবিধা কি? আমাদের সভাসমাবেশ করতে বাধা দেওয়া হয় কেন? আমাদের নৈতিক বল, নৈতিক শক্তির সামনে সকারের দাড়ানোর ক্ষমতা নেই। সেই জন্য তারা আমাদের কথা বলেত বাধা দেয়। গণতান্ত্রিক অধিকার সমাবেশ করতে বাধা দেয়।
বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য রণজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, দলের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য আব্দুস সত্তার, আজিজুর রহমান, বাগেরহাট জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট ডাকুয়া মুনছুর আলী, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বন্দর বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী কল্লোল মুস্তফা প্রমুখ।
১৩শ’ ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার কৈর্গদাসকাঠি-সাপমারী কাটাখালী মৌজায় ১ হাজার ৭শ’ ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এ জন্য ২০১০ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি)’ এবং ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)’ মধ্যে এক চুক্তি সম্পাদন হয়।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করছেন পরিবেশবাদীরা। এ জন্য চুক্তির পর থেকেই পরিবেশবাদী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সুন্দরবনের পাশে এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধীতা করে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।