বাগেরহাটের মোল্লাহাটে উন্মত্ত হয়ে আক্রমণ চালিয়ে তিন জনকে হত্যা করা সারর্কাসের হাতিটিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সোববার দিবাগত রাতে সিলেট থেকে হাতিটির মালিক ঘটনাস্থালে এসে হাতিটিকে সরিয়ে নেয়।
এর আগে শনিবার (২৩ মে) ভোরে হাতিটি আক্রমণ চালিয়ে জেলার মোল্লাহাট উপজেলায় দুই নারীসহ তিনজনকে হত্যা করে। এর পর থেকে পুরুষ হাতিটি গত ৩ দিন ধরে উপজেলার আটজুড়ি ইউনিয়নের বাসাবাড়ি গ্রামের একটি বাঁশ বাগানে অবস্থান করছিল।
ফলে আতঙ্ক বিরাজ করছিল আটজুরি ইউনিয়নসহ আশপাশের গ্রাম গুলোতে।
মোল্লাহাটের আটজুরি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফারুক মোল্লা মঙ্গলবার (২৬ মে) সকালে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, হাতটিকে সরিয়ে নেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে শস্তি ফিরে আসেছে।
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ন ম খায়রুল আনাম সকালে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, সোববার রাতে হাতিটির মালিক সিলেটের শ্রীমঙ্গল এলকার আব্দুল মতিন মোল্লাহাটে এসে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে আর্থিক সহায়তা দেন। পরে তিনি তার হাতিটিকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেন।
ক্ষতিপূরণ হিসাবে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৬০ হাজার টাকা এবং হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি বিনষ্ট করা ৯টি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা টাকা দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
নিহতদের পক্ষে মনোয়ারা বেগমের মেয়ে লিমা আক্তার, কুসুম বিশ্বাসের ছেলে জয়দেব বিশ্বাস এবং মিজানুর রহমান ফকিরের ছেলে রবিউল ইসলাম ক্ষতিপূরণের টাকা গ্রাহণ করেন।
পরে রাতেই ট্রাকযোগে হতিটিকে নিয়ে সিলেটের উদ্যেশে রওনাদেন তিনি।
যে কারনে আক্রমন চালায় হাতিটি –
হাতিটির মালিক আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, তার এই হাতিটি আগে কখনই এমন আচারণ করেনি।
মতিনের বরাত দিয়ে ওসি খাইরুল আনম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, হাতিটি কি কারনে সে এমন আক্রমণ চালায় তা জানতে মালিক হাতির মাহুতকে জিঞ্জাসাবাদ করেছে। এতে আক্রমণ কারার প্রাথমিক একটি কারণ জানা গেছে।
হাতির মালিক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, মাহুত মো: ফারুক ২৩ মে হাতিটিকে বাগেরহাটের ফকিরহাটের একটি মেলা থেকে গোপালগঞ্জে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে মধুমতি নদীর মোল্লাহাট ব্রিজ পার হবার সময় হাতটি ব্রিজের উপর দিয়ে যেতে অনিহা দেখায়। এক পর্যায়ে তাকে জোর করেও মাহুত ওই ব্রিজের উপর হাতিটিকে তুলতে পরছিল না।
এসময় মাহুত ফারুক হাতিকে লাঠি দিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত করে। এই আঘাতে হাতিটির একটি কানও ফেটে যায় বলে হাতির মালিক আব্দুল মতিন জানিয়েছেন।
এর পর শনিবার ভোররাতে হাতিটি শিকল ছিড়ে গোপালগঞ্জ থেকে মধুমতি নদী সাতরে বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায় চলে আসে। ভোরে হাতিটি উপজেলার গারফা গ্রামে আসলে কিছু দুষ্টু শিশু তাকে বিরক্ত করে।
এতে হাতিটি ক্ষিপ্র ও বিরক্ত হয়ে এই হামলা চালায় বলে হাতির মালিক আব্দুল মতিন জানিয়েছেন।
ঘটনার দিনের কয়েকজন প্রতক্ষদর্শী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ২৩ মে ভোরে হাতিটি উন্মত্ত হয়ে শেকল ছিড়ে মধুমতি নদী পার হয়ে মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের গারফা গ্রামে ঢুকে পড়ে। উন্মত্ত হাতিটি সেখানে অন্তত ৯টি ঘর ভাংচুর করে এবং মনোয়ারা বেগম নামে এক নারীর উপর হামলা চালায়।
পরে উন্মত্ত হাতিটি লেজ ও শুঁড় তুলে ডাকতে ডাকতে দৌড়াতে থাকে এবং কাহালপুর গ্রামে পথচারী কুসুম বিশ্বাস ও বাসাবাড়ি গ্রামে মিজান ফকিরকে হত্যা করে।
প্রসঙ্গত, গত প্রায় ৯ বছর আগে বাগেরহাট সদর উপজেলার দেপাড়া স্টিল ব্রিজের কাছে হাতির আক্রমণে এক মাহুত নিহত হয়েছিল। সে সময় ওই স্টিল ব্রিজ পার হতে না চাওয়ায় একটি সার্কাসের হাতিকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল তার মাহুত। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে হাতিটি তার মাহুতকে হত্যা করে।