ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে অপহৃত তাজরিয়ান জামান তাজবীর (৭) নামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে বাগেরহাট থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার (২৩ মে) সকালে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এসময় অপহরণের অভিযোগে সোহেল নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে বাসের টিকিট কাউন্টারের লোকজন।
তাজবীর ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার চান মিঞা রোডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামানের ছেলে। সে ঢাকার মতিঝিল মডেল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
আটক সোহেল রানা (১৮) বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালি গ্রামের মো. বেলার চৌকিদারের ছেলে। সোহেল তাজবীরদের বাড়িতে তিন বছর ধরে কাজ করত।
এ ঘটনায় সোহেল রানার নাম উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার রাতে যাত্রাবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তাজবীরের বাবা মনিরুজ্জামান।
তাজবীরের পরিবার এবং থানায় আটক সোহেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে আটক হওয়া পর্যন্ত সোহেল তাজবীরের পরিবারের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ বা মুক্তিপণ দাবি করেনি।
তাজবীরের বরাত দিয়ে বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তোজাম্মেল হক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বাড়ির কর্মচারী সোহেল তাজবীরকে স্কুল ও কোচিং সেন্টারে আনা-নেওয়ার কাজ করত। শুক্রবার (২২ মে) বিকেলে কোচিং সেন্টারে যাওয়ার কথা বলে সোহেল তাজবীরকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর তারা আর বাড়িতে ফেরেনি। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান।
ওসি আরও বলেন, তাজবীরকে নিয়ে সোহেল গতকাল সকালে তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে যাচ্ছিল। এ সময় বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হলে তাঁরা ওই শিশুসহ সোহেলকে আটক করে বাগেরহাট মডেল থানা-পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
ঘটনাটি ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় জানানো হয়েছে। আটক সোহেল ও উদ্ধার হওয়া শিশু তাজবীরকে নিয়ে যেতে ঢাকা থেকে পুলিশের একটি দল বাগেরহাট আসছে বলে জানান ওসি তোজাম্মেল।
গতকাল দুপুরে সোহেলা রানা বাগেরহাট থানায় বসে এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করে, ‘তাজবীরকে নিয়ে আমি এক দিনের জন্য আমার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলাম। ঘটনাটি যে এত জটিল হয়ে পড়বে, আমি তা বুঝতে পারিনি। খারাপ উদ্দেশ্য থাকলে আমি আরও টাকাপয়সা নিয়ে আসতে পারতাম।’
সোহেল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানায়, তিন বছর আগে গ্রামের এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে ওই বাড়িতে কাজ নেয়। তখন থেকে সে তাজবীরের দেখাশোনা করত।
তাজবীরের বাবা-মাকে না জানিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে সোহেল চুপ করে ছিল।
বাগেরহাট মডেল থানায় ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন আত্মীয়র সঙ্গে স্বাভাবিক মেজাজে সময় কাটাচ্ছিল শিশু তাজবীর। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তাজবীর বলে, ‘শুক্রবার আমার কোচিং ছিল না। তবু সোহেল ভাইয়া কোচিংয়ের কথা বলে আমাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় এবং বেড়াতে যাবার কথা বলে আমাকে এখানে নিয়ে আসে।’
তাজবীরের মা তানিজ পারভীন রাতে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘সোহেল আমাদের বিশ্বস্ততা অর্জন করেছিল। সে যে এই কাজ করবে, আমরা চিন্তাও করিনি।’