বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায় উন্মত্ত হওয়া একটি সার্কাসের হাতির আক্রমণে দুই নারীসহ তিন জন নিহত হয়েছেন। এ সময় হাতিটি অন্তত ৭টি বসতঘর ভাঙচুর করে।
শনিবার (২৩ মে) ভোরে মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের গারফা গ্রাম এবং আড়জুড়ি ইউনিয়নের কাহালপুর গ্রামে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সার্কাসের একটি পুরুষ হাতি ভোরে পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ জেলার গুনাপাড়া এলাকায় একটি গাছের সাথে শেকল দিয়ে বাঁধা ছিল। হাতিটি হটাৎ উন্মত্ত (উত্তেজিত) হয়ে শেকল ছিড়ে মধুমতি নদী পার হয়ে বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলায় ঢুকে পড়ে। এসময় উত্তেজিত হাতিটি উপজেলার গারফা ও আড়জুড়ি গ্রাম ছাড়াও আরও কয়েকটি গ্রামে হামলা চালায়।
ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে হাতিটি তাণ্ডব চালায়। এতে তিন জন নিহত এবং কমপক্ষে ৭টি বসতঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের ইয়ার আলীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫), মোল্লাহাট উপজেলার কাহালপুর গ্রামের যতিন্দ্রনাথ বিশ্বাসের স্ত্রী কুসুম বিশ্বাস (৬১) ও বাসাবাড়ি গ্রামের মিজানুর রহমান ফকির (৪৫)।
এদের মধ্যে মনোয়ারা বেগম গারফা গ্রামে তার জামাই বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। হাতিটি মনোয়ারা বেগম এবং কুসুম বিশ্বাসের উপর গারফা গ্রামে এবং মিজানুর রহমানের উপর বাসাবাড়ি গ্রামে হামলা চালায়।
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ন ম খায়রুল আনাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে মনোয়ারাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে এবং অন্য দু’জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
ওসি আরো বলেন, প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা ধরে উন্মত্ত হাতিটি তাণ্ডবের পর সকাল ৮টার দিকে মাহুত (পোষা হাতির পরিচারণাকারী) এসে গ্রামবাসী ও পুলিশের সহযোগিতায় হাতিটিকে কিছুটা শান্ত করতে সক্ষম হয়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকাবাসী ও পুলিশ হাতিটিকে মোল্লাহাট উপজেলার বাসাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেনের বাগানে ঘিরে রেখেছে।
এদিকে, এ গ্রামেরই একজনসহ তিনজনকে হত্যাকারী হাতিটি এখানে অবস্থান নেয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে।
প্রতক্ষদর্শীরা বাগেরহাট ইনফো ডটকমের কাছে ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, শনিবার ভোরে উত্তেজিত হাতিটি মধুমতি নদী পার হয়ে প্রথমে মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের গারফা গ্রামে ঢুকে পড়ে। এখানে অন্তত সাতটি ঘর ভাঙচুর করে এবং মনোয়ারা বেগম নামে এক নারীর ওপর হামলা চালায় হাতিটি।
পরে পুরুষ হাতিটি লেজ ও শূঁড় তুলে ডাকতে ডাকতে দৌঁড়াতে থাকে এবং কাহালপুর গ্রামে পথচারী কুসুম বিশ্বাস ও বাসাবাড়ি গ্রামে মিজান ফকিরকে হত্যা করে।
হাতির মাহুত মো. ফারুক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, হাতিটির মালিক সিলেটের শ্রীমঙ্গল এলাকার জনৈক মতিয়ার রহমান। তার আরও একটি পোষা স্ত্রী হাতি আছে। তিনি হাতি দুটি দেশের বিভিন্ন স্থানে সার্কাস দলের কাছে ভাড়া দেন।
স্ত্রী হাতিটি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় একটি সার্কাস দলের সঙ্গে থাকা অবস্থায় গত সপ্তাহে প্রজননের জন্য পুরুষ হাতিটিকে সেখানে আনা হয়। গত শুক্রবার স্ত্রী হাতিটি ফকিরহাট থেকে ঢাকায় উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পুরুষ হাতিটি গোপালগঞ্জ জেলার গুনাপাড়া এলাকায় রাখা হয়। গত রাতেও সেটি গুনাপাড়ায় রাস্তার পাশে শেকলে বেঁধে রাখা ছিল।
‘ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হাতিটি শেকল ছিড়ে মধুমতি নদী পার হয়ে গারফা গ্রামে ঢুকে পড়ে এবং পরবর্তী দেড় থেকে দু’ ঘণ্টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটায়। খবর পেয়ে আমি এসে গ্রামবাসীর সহায়তায় হাতিটিকে শান্ত করার চেষ্টা করি।’ বলেন মাহুত।
হাতিটি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে দাবি করে মাহুত ফারুক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, হাতিটিকে শান্ত করে এখান থেকে সরিয়ে নিতে তার সঙ্গী স্ত্রী হাতিটিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আনা হচ্ছে।
হাতির মালিক হাতিটি সরিয়ে নিতে না পারলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মোল্লাহাট থানার ওসি খায়রুল আনাম।