ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এখন স্টেজে সবাই মুখ দেখাতে চায়, সবাই নেতা হতে চায়! নেতার ভারে স্টেজ আজ কাঁপছে।’
শনিবার (২৩ মে) সকালে বাগেরহাটের খানজাহান আলী ডিগ্রী কলেজ মাঠে জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের বঙ্গবন্ধুর জীবন-আদর্শ থেকে শিক্ষা লাভ করতে হবে। যদি ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়ত তাহলে আজ এ অবস্থা হত না। এখন স্টেজে সবাই মুখ দেখাতে চায়, সবাই নেতা হতে চায়। নেতার ভারে স্টেজ আজ কাঁপছে। সামনে কোন কর্মী নেই। তোমাদের কর্মী হতে হবে।’
সামনে থেকে তৃনমূল কর্মীদের নেতৃত্ব দিতে হবে। তাহলেই প্রকৃত নেতা হওয়া যাবে। বঙ্গবন্ধুর জীবনী সেলফে তুলে রাখলে হবে না, তা পড়তে হবে।
বঙ্গবন্ধুর পরিবারে অশিক্ষিত লুটেরা নেই। শেখ হাসিনার জীবন আর্দশ থেকে তোমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
খালেদা জিয়াকে উদেশ্য করে তিনি বলেন, হাওয়া ভবনের লোকজন দেশের সম্পদ খাওয়া ছাড়া কিছুই করে নাই।
এসময় তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি সরকারের সময় মংলা বন্দরকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিানার সরকার ক্ষমতায় আসার পর মংলা বন্ধর পুনরায় চালু করেছে। বিদেশ থেকে আমদানীকৃত পন্যের ৪৫ ভাগ এখন মংলা বন্দর দিয়ে খালাস করা হচ্ছে ফলে গতিশীল হচ্ছে মংলা বন্দর।’
পদ্ম সেতু প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই বলে ছিল দেশের টাকায় পদ্ম সেতু নির্মাণ সম্ভব না। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার দেশের টাকায় পদ্ম সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। অচিরেই পদ্ম সেতুর সুফল এ অঞ্চলের মানুষ ভোগ করবে। ঢাকায় যেতে আসতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা।’
এর আগে সকালে বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন, বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা বাগেরহাট-১ আসনের এমপি শেখ হেলাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন হয়। এ সরকারের আমলে নিজস্ব অর্থায়ানে দেশের সব থেকে বড় উন্নয়ন প্রকল্প পদ্ম সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে। ২০১৮ সালের মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এ অঞ্চলের মানুষের কাংখিত বিমানবন্দর নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবছরের মধ্যে এ বিমান বন্দরের কাজ শুরু হবে। বিমান বন্দরের কাছে নির্মাণ করা হবে একটি পাঁচ তারা হোটেল।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বাগেরহাট-৪ আসনের এমপি সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-২ আসনের এমটি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, বাগেরহাট পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান খান মুজিবুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর জায়েসী আশরাফী জেমস, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক লিটন সরকার প্রমুখ।
শিগগিরই চালু হচ্ছে আন্তদেশীয় সড়ক-
এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাগেরহাটের মহাসড়কে একটি এক্সেস লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র উদ্বোধনে গিয়ে বলেন, খুব শিগগির বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আন্তদেশীয় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আগামী মাসের ১৫ তারিখে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে চার দেশীয় সড়ক পরিবহনমন্ত্রীদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার কথা।
এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দেশগুলোর মধ্যে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী চলাচল সহজতর ও উন্নত হবে, রাজস্ব আয় বাড়বে বাংলাদেশের।
শনিবার (২৩ মে) সকাল ১০টায় জেলার ফকিরহাট উপজেলাধীন মংলা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের শ্যামবাগাত নামক স্থানে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে এক্সেস লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ঢাকার তীব্র যানজট নিরাসনে মন্ত্রাণালয় কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, সড়ক-মহাসড়ক যত শক্ত ও মজবুদ করে তৈরী করা হোক না কেন, যানবাহনে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের কারণে দ্রুতই এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সারাদেশে সড়ক-মহাসড়কে ঘনঘন দূর্ঘটনা কবলিত ১শ ৪৪টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজা ও প্রশস্ত করা হচ্ছে।
চলতি বছরের মধ্যে এ কাজ শেষ করতে ব্যায় হবে ১শ’ ৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭০টির কাজ চলমান রয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে এ কাজ শেষ করতে ব্যয় হবে ১৬৫ কোটি টাকা।
এসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাড়াও সড়ক ও সেতু বিভাগের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ আলী, খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফকির আবদুুর রবসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।