বিশ্ব ঐহিত্য সুন্দরবনে ফের জাহাজ ডুবির ঘটনায় ‘পরিবেশগত ক্ষতি’র আশঙ্কায় ডুবে যাওয়া সারবাহী কার্গো জাহাজের মালিক ও চালকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বনবিভাগ।
বুধবার দিবাগত রাতে বাগেরহাটের শরণখোলা থানায় এই মামলা দায়ের কারা হয়। এতে বনের জলজ এবং বাস্তুসংস্থানগত পরিবেশের এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেছেন শরণখোলা রেঞ্জের বন কর্মকর্তা।
বাগেরহাট জেলার অন্তর্গত সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের মরা ভোলা নদীর বিমলের চর এলাকায় তলা ফেটে মঙ্গলবার (৫ মে) বিকেলে সারবোঝাই এমভি জাবালে নূর নামে কার্গো জাহাজটি ডুবে যায়।
পহেলা মে মংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়ায় অবস্থানরত একটি বিদেশি জাহাজ থেকে ৬৭০ মেট্রিক টন এমপিও সার নিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির উদ্যেশে রওনা দেয় কার্গো জাহাজটি। ওই দিন বিকাল ৫টার ঘটনাস্থালে পৌঁছালে মরা ভোলা নদীতে ডুবোচরে আটকে যায়।
এরপর ৪ মে সকাল ১০ টার দিকে জাহাজের মাঝামাঝি ডান পাশে তলায় ফাটল দেখা দেয়। বিষয়টি মালিক পক্ষকে জানিয়ে উদ্ধারের জন্য সাহয্য চাওয়া হয়। কিন্তু পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে কার্গো জাহাজটি ডুবে যায়।
মামলার বাদী সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) কামাল উদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার (৭ মে) সকালে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, কার্গো ডুবির ঘটনায় শরণখোলা থানায় দায়ের করা জিডিটি (সাধারণ ডায়রি) পরবর্তীতে মামলায় রুপ দেওয়া হয়েছে।
মামলায় সারবাহী কার্গো জাহাজ ডুবে বনের পরিবেশের কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে মেসার্স আল এহসান শিপিং লাইনসের ‘এমভি জাবালে নূর’ কার্গোর মালিক আমিনুল ইসলাম, মাস্টার আবদুল মতিন ও ইঞ্জিন চালক মাসুম বিল্লালকে আসামি করা হয়েছে।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজটিতে থাকা এমওটি সার এখনও অপসারণ করা সম্ভব হয়নি।
বুধবার বিকেল থেকে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত একটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে কার্গো জাহাজটির ভেতরে থাকা গুলে যাওয়া সার অপসারণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ড্রেজারটিতে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় তা ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে এসিএফ কামাল উদ্দিন আহমেদ বাগেরহাট ইনফোকে জানান, আগের ড্রেজারটিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় তারা আরো একটি ড্রেজার ঠিক করেছেন। দুপুর ২টার দিকে এই ড্রেজারটি ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে।
এরপর আবারও সার অপসারণের কাজ শুরু হবে। নতুন ড্রেজারটি দিয়ে রাতের মধ্যেই কার্গোর ভেতরে থাকা গুলে যাওয়া সার অপসারণ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার বিকেলে ডুব চরে আটকে পড়া কার্গোটি উদ্ধারের সময় ডুবে যাওয়ার পর থেকে কার্গোটির মালিক পক্ষের লোকেরা গা ঢাকা দিয়েছে।
কার্গোতে থাকা সার নদীতে ডুবে যাওয়ায় তার পনির সাথে মিলে গিয়ে পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেজ্ঞরাও।
সিলেট শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়ো-টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, এখন নদ-নদীতে মাছের প্রজনন মৌসুম চলছে। এ অবস্থায় দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলীপ দত্ত বলেন, এমওপি একটি রাসায়নিক সার। এটি পানিতে সহজে দ্রবিভূত হয়। বিপুল পরিমাণ সার একটি ছোট এলাকায় একসঙ্গে দ্রবিভূত হয়ে জলজ প্রাণীর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
সুন্দরবন একটি স্পর্শকাতর এলাকা। বিষয়টি মাথায় রেখে নিবীড় পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলে।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ক্ষতির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে।
বাগেরহাটে দায়িত্বরত কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক জয়নুল আবেদীনের মনে, এ সার কৃষি ও মৎস্য চাষে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। ফলে এটি জলজ প্রাণীর মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে না।
এর আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে ফার্নেস অয়েল বোঝাই ‘সাউদার্ণ স্টার সেভেন’ নামের একটি জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে সুন্দরবকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে সে সময়ে ছুটে আসে জাতিসংঘের বিষেশজ্ঞ দল।