সুন্দরবনের মরা ভোলা নদীতে ৬৭০ মেট্রিক টন এমওপি (পটাশ) সার নিয়ে নিমজ্জিত কার্গো জাহাজ ‘এমভি জাবালে নূর’ উদ্ধারে কাজ শুরু হয়নি।
পরিবেশগত ক্ষতির আশংকায় সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ বাগেরহাটের শরণখোলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।
এমওপি রাসায়নিক সারবোঝাই এই কার্গো ডুবে যাওয়ায় ওই এলাকার নদীতে পরিবেশগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনা ও বাগেরহাটের বনবিভাগের কর্মকর্তারাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মেসার্স আল এহসান শিপিং লাইনসের ‘এমভি জাবালে নূর’ কার্গোর চালক হাফিজুর রহমান গত মঙ্গলবার রাতে শরণখোলা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম ওই জিডি’র বরাত দিয়ে বলেন, এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১ মে মংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়ায় অবস্থানরত একটি বিদেশি জাহাজ থেকে ৬৭০ মেট্রিক টন এমপিও সার নিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি যাওয়ার পথে বিকাল ৫টার দিকে মরা ভোলা নদীতে ডুবোচরে আটকে যায়। এরপর ৪ মে সকাল ১০ টার দিকে জাহাজের মাঝামাঝি ডান পাশে তলায় ফাটল দেখা দেয়। বিষয়টি মালিক পক্ষকে জানিয়ে উদ্ধারের জন্য সাহয্য চাওয়া হয়।
কিন্তু পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে কার্গো জাহাজটি ডুবে যায়।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সুন্দরবন বিভাগের বন সংরক্ষক সুনীল কুমার কুণ্ডু, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমির হুসাইন চৌধুরী ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাগেরহাট কার্যালয়ের উপপরিচালক জয়নুল আবেদীন।
এদিকে আটকে থাকা সারবাহী ওই কার্গো জাহাজটি থেকে ভেসে উঠা সার সরানোর কাজ শুরু করেছে বনবিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, এরই মধ্যে ডুবে থাকা সারবাহী কার্গো থেকে পাটাশ জাতীয় এমওটি সার পানির সাথে মিশতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বালি উত্তলনের ড্রেজার দিয়ে কার্গোটির ভেতরে গলে যওয়া সার সরিয়ে নিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ দত্ত বলেন, ‘এমওপি একটি রাসায়নিক সার। এই সার পানিতে সহজে দ্রবীভূত হয়। প্রচুর পরিমাণে এই সার একটি ছোট এলাকায় দ্রবীভূত হয়ে জলজ প্রাণ ও সম্পদের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দরবন স্পর্শকাতর এলাকা। তাই বিষয়টি মাথায় রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বাগেরহাট কার্যালয়ের উপপরিচালক জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এই সার কৃষি ও মৎস্য চাষের কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। ফলে এই সার জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে না।’
এর আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে ফার্নেস অয়েল বোঝাই ‘ওটি সাউদার্ণ স্টার ৭’ নামের একটি (অয়েল ট্যাঙ্কার) জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে সুন্দরবকে রক্ষায় প্রযোজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে সে সময়ে ছুটে আসে জাতিসংঘের বিষেশজ্ঞ দল।
এই ঘটনার ৫ মাস না যেতে ফের সার বোঝাই এ জাহাজ ডুবির ঘটনায় সুন্দরবন আবারও বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ল বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।