বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কর্মচারীরা জব্দকৃত মাছের পোনা বিক্রি করে কথিত পাহারাদার কবির শেখের (৩০) ওপর সে দায় চাপান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল হালিম গত ২৮ এপ্রিল জব্দকৃত মাছ বিক্রির অভিযোগে কবির শেখকে এক মাসের কারাদন্ড দেয়।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকালে কবিরকে বাগেরহাট কারাগারে প্রেরন করেছে পুলিশ। সে উপজেলার বারইখালী গ্রামের কালু (মকার) শেখের ছেলে।
জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল কোষ্টগার্ড ৩ লাখ বাগদা চিংড়ির রেণুপোনাসহ একটি ট্রলার ও ৪ জেলেকে আটক করে। আটকের পর ইউএনও আব্দুল হালিম ওই দিন সন্ধায় ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে আটক চার জেলেকে ৩ মাসের কারাদন্ড, ট্রলার জব্দ এবং রেণুপোনা নদীতে অবমুক্তের রায় দেন।
পরে রাতে কিছু রেণু পোনা পানগুছি নদীতে অবমুক্ত করা হয় এবং বাকি প্রায় ২ লাখ রেণুসহ ট্রলারটি বারইখালী গ্রামের কবির শেখের জিম্মায় রেখে যান ইউএনও।
ঘটনার সূত্রপাত সেখান থেকে। অভিযোগ ওঠে রাত ২টার দিকে ইউএনও’র ড্রাইভার, নৈশ প্রহরীসহ ৪/৫জন লোক গিয়ে ট্রলার থেকে ওই রেণুপোনা বিক্রি করে দেন।
রাতেই এ ঘটনা জানাজানি হলে, মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) সকালে কথিত পাহারাদার কবির শেখকে ১ মাসের কারাদন্ড প্রদান করে ইউএনও।
সাজাপ্রাপ্ত কবির শেখ (পেশায় ভ্যান চালক) এই প্রতিবেদককে জানান, গভীর রাতে ইউএনওর ড্রাইভার রুহুল, নৈশ প্রহরী জাকিরসহ ৩/৪জন মিলে ট্রলার থেকে মাছ বিক্রি করে। খবর শুনে ওই রাতেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামসহ এলাকার বহু লোক ঘটনাস্থলে এসে সবকিছু দেখেন।
এমন অভিযোগ প্রেক্ষিতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে অসহায় কবিরের পরিবারকে টাকা দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
জব্দকৃত মাছ চুরি করে বিক্রির সাথে জড়িত ইউএনও অফিসের ৪/৫জন কর্মচারী পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। এছাড়া তাদের পক্ষ হয়ে একটি দালাল চক্র কবিরের স্ত্রী হালিমা বেগমকে এ বিষয়ে কারো কাছে কিছু না বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
কবিরের স্ত্রী হালিমা বেগম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তাদের ৬টি শিশু সন্তানসহ ৮জনের সংসার। পরিবারে কবিরই ছিলএক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। ইউএনও সাহেব তার কর্মচারীদের অপরাধ ঢাকতে আমার স্বামীকে সাজা দিয়েছেন।
হালিমা আরো জানান, মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) ইউএনও অফিসে কর্মরত জনৈক এক ব্যক্তি নগদ ২ হাজার টাকা দিয়েছে।
কবিরের মা কমলা বেগম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বুধবার (২৯ এপ্রিল) তাদের আরো ৩ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে ওই ব্যক্তি বলে গেছিলেন।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘সরকারি লোকেরা মাছ চুরি করে বিক্রি করেছে অথচ আমার ছেলে জেল খাটছে।’
এ অবস্থায় দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি কবিরের পরিবার চরম অসহায় পরিস্থিতিতে পড়েছেন। এ ঘটনায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে (মোবাইল) বুধবার বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাংগীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।