সুন্দরবনে বাঘের সাথে লড়াই করে বেঁচে ফিরেছেন আবুল হাসেম মোল্লা (৫৮) নামে এক মৌয়াল (মধূ সংগ্রহকারী)।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের থাবা থেকে প্রাণে রক্ষা পেলেও অসম যুদ্ধে গুরুতর আহত হন তিনি।
বুধবার সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই মৌয়ালকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) বিকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমুনি সংলগ্ন শিয়ালী নদীর বাদামতলা খাল এলাকায় আবুল হাসেম বাঘের আক্রমনের শিকার হন।
হাসেম মোল্লা বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বনসংলগ্ন সাউথখালী ইউনিয়নের উত্তর সাউথখালী গ্রামের প্রয়াত দলিল উদ্দিন মোল্লার ছেলে।
মধু সংগ্রহকারী দলের নেতা আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তার নেতৃত্বে আবুল হাসেম মোল্লাসহ ৮ মৌয়াল নৌকা নিয়ে গত ১০ এপ্রিল পূর্ব সুন্দরবনের বগী স্টেশন থেকে দুই মাসের (পাস) অনুমতি নিয়ে মধু আহরণে সুন্দরবনে যান।
মঙ্গলবার সুপতি ফরেস্ট স্টেশনের বাদামতলা খালের পাশে বনের ভেতর তারা আলাদা আলাদাভাবে ভাগ হয়ে মধু আহরণ করতে থাকেন। এসময় হঠাৎ বাঘের আক্রমণের শিকার হন মৌয়াল আবুল হাসেম মোল্লা।
বাঘটি প্রথমে হাসেমের পেছন থেকে ঘাড় বরাবর আক্রমণ করে। কিন্তু তার (কাসেমের) পিঠে মধুর ড্রাম ঝুলানো থাকায় প্রথম থাবাটি ওই ড্রামের ওপর দিয়ে যায়। পরে বাঘটি আবারো আক্রমণ করে তার ডান হাতে একটি থাবা বসায়।
কুদ্দুস বলেন, “প্রাণ বাচাঁতে প্রায় ৫-৬ মিনিট ধরে বাঘের সঙ্গে হাসেমের ধস্তাধস্তি চলে। ওই সময় ওর ডাক চিৎকার শুনতে পেয়ে আমরা দ্রুত ছুটে এসে ওই দৃশ্য দেখে বাঘের কাছে না গিয়ে নৌকায় থাকা হাড়ি ও থালা বাজিয়ে শব্দ করতে থাকি।”
শব্দ পেয়ে বাঘটি হাসেমেকে ফেলে রেখে বনের গহীনে চলে যায়। পরে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সুন্দরবনের কোকিলমনি এলাকায় কোস্ট গার্ড কন্টিনজেন্টে (কোস্টগার্ডের কোকিলমুনি ক্যাম্পে) নিয়ে যান।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ট্রলারে করে পূর্ব সুন্দরবনে বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিস হয়ে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং এরপর খুলান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান আব্দুল কুদ্দুস।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. কামাল আহমেদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বাঘে হাসেমের ডান হাতের কনুইয়ের উপরের মাংসপেশি ছিঁড়ে নিয়েছে। তার বাম হাতেও আঁচড় লেগেছে।
তিনি বলেন, মৌয়াল হাসেমের উপর বাঘের আক্রমণটা ব্যতিক্রম। বাঘ সাধারণত আক্রমণ করে গলা বা মাথায়। কিন্তু এই বাঘটি তা না করে প্রথমেই তার ডান হাতে কামড় দিয়েছে, যার কারণে হাসেম ডাক-চিৎকার করার সুযোগ পেয়েছেন।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক অসীম কুমার মজুমদার জানান, আবুল হাসেমের ডান হাতে কনুয়ের উপরের মাংসপেশি ছিঁড়ে নেওয়ায় বড় ক্ষত তৈরি হয়েছে। বুধবার দুপুরে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।