মংলা-ঘষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌ-চ্যানেল খনন কার্যক্রমে মাটি ডামপিং ব্যবস্থা না করে অপরিকল্পিত ভাবে যত্রতত্র মাটি ফেলায় দু’পাড়ের বিপুল পরিমান মালিকানাধীন ফসলি জমিসহ বসতভিটা বাড়ি প্লাবিত ও ভরাট হয়ে মানবিক বির্পযয় দেখা দিয়েছে।
এঘটনায় জনদূর্ভোগে পড়া এলাকাবাসী ও মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটি বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচী পালন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে।
বুধবার দুপুরে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাফা মোহাম্মাদ আরিফের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে দেয়া স্মারকলিপিতে ভরাট হয়ে যাওয়া এই চ্যানেলটি খনন করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে অভিযোগ করা হয়।
স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, “চ্যানেলটি খনন প্রক্রিয়াটি তড়িঘড়ি করে শুরু করায় ও মাটি ফেলার জন্য উপযুক্ত ড্যাম্পিং ব্যবস্থা না করে ড্রেজারের পাইপ দিয়ে যত্রতত্র মাটি ফেলা হচ্ছে। এত ব্যাক্তিগত মালিকানাধীন ফসলি জমি, বসতভিটা, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, পুকুর-জলাধার লবনাক্ত কাঁদা মাটিতে ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। এব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে মৌখিকভাবে ও লিখিতভাবে জানানোর পরও অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। বরং আর ও বেশী করে বিআইডাব্লিউটিএর কর্মকর্তারা স্থানীয় মানুষকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে একের পর এক ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমিতে মাটি ফেলে জীবন জীবিকা ও পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।
উপজেলার হুড়কা ইউনিয়নের প্রায় ৪/৫ শ একর জমিতে মাটি ফেলে এভাবে ভরাট করা হয়েছে। এছাড়া পেড়িখালী ইউনিয়ন, রামপাল সদর ইউনিয়ন, বাঁশতলি ইউনিয়নের প্রায় ৬/৭ শ একর জমিতে মাটি ফেলা হয়েছে যা অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে বসতবাড়ীতে পানি উঠে বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় শত শত পরিবার বাড়ীঘর ছেড়ে অন্যাত্র চলে গেছে। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য ভুক্তভোগীরা বার বার আবেদন নিবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।
এ চ্যানেলের দুপাড়ে বিপুল পরিমানের সরকারি খাস জমি রয়েছে। সে জমির চারিপাশ ৪/৫ মিটার উচু করে বেড়ী বাঁধ নির্মাণ করে তাতে বিআইডাব্লিউটিএর নির্ধারিত ১ কোটি ঘন মিটার মাটি ফেলে সংরক্ষণ করা সম্ভব। সেটা না করে চ্যানেল পাড়ের কোন কোন জায়গার মৎস্য খামারের বেড়ী বাঁধ ও কিছু জায়গায় বিআইডাব্লিউটিএর বাঁধ নির্মাণ করে ভেতরে মাটি ফেলা হচ্ছে। এতে সরকারি জমি ছাড়াও ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমিতে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়সহ চ্যানেলের জোয়ারাধার বা জোয়ার অববাহিকা নষ্ট হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারি চর ভরাটি জায়গায় মাটি ফেলার স্থান সংকুলান না হলে ব্যাক্তি মালিকানাধীন জায়গা অধিগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষতিপুরণ দিয়ে তবে মাটি ফেরতে হবে। এর পাশাপাশি যারা ইতিমধ্যে ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দিতে হবে। উদ্ভুত সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমিতে মাটি ফেলা বন্ধ রাখতে হবে। চ্যানেলকে সচল করতে হলে যে কার্যক্রমটি সর্বপ্রথম সম্পন্ন করা উচিত ছিল সেটা হচ্ছে, প্রভাবশালীদেও দখলে থাকা রামপাল-মংলার ৪ শতাধিক খালে প্রায় দেড় সহস্রাধীক বাঁধ রয়েছে যা এখনও খনন করা হয়নি। চ্যানেল খননের পাশাপাশি পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার আওতায় ৩৪/২ নং ফোল্ডারের স্লুইসগেট ও বেড়ী বাঁধ দ্রুত সম্পন্নের দাবি জানানো হয়।
উপজেলা পরিষদ ঘেরাও ও স্মারকলিপি প্রদান কালে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসীর দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মোয়াজ্জেম হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হোসনে আরা হিলি। এসময়ে বক্তব্য রাখেন চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন শেখ, সাধারন সম্পাদক এম,এ সবুর রানা, সুশান্ত কুমার, গাজী শাহজালাল, অশেষ রায় পল্টু, আঃ আজিজ শেখ, অচিন্ত মন্ডল প্রমুখ।