পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ। বাঙালির চিরায়ত উৎসব। ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব পালনে আয়োজনের কমতি নেই ‘বিশ্ব ঐতিহ্যে’র শহর বাগেরহাটে।
পৃথিবীর আবর্তনে প্রতিদিনের মতো সূর্য উঠলেও মঙ্গলবার তা ভিন্ন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। এই সূর্য দয়ে ভোরের নব আলোয় সূচনা ঘটলো বাংলা নতুন বছরের। স্বাগত ১৪২২ বঙ্গাব্দ।
বাংলা নববর্ষ ১৪২২ বরণে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার আর বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাগেরহাটে শরু হয়েছে ৭ দিনব্যপী বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলা।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে বাগেরহাট স্টেডিয়াম থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আদলে একটি বর্ণ্যাঢ্য র্যা লি বের করা হয়। এতে অংশ নেয় শহরের বিভিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং সমাজের নানা শ্রেণী পেশার কয়েক হাজার মানুষ।
বাঙালি সাজ আর বাঙালি ঢ়ংয়ে উৎসবের এ আয়জনকে রঙিন করে তোলে শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের বর্ণিল সাজ-সজ্জা আর প্রানবন্ত উৎসাচে রঙিন চারপাশ জানান দিচ্ছিল নতুনের বার্তা।
মঙ্গল শোভাযাত্রার সাজে র্যা লিটি শহরের প্রধার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গনে আয়জিত ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলায় গিয়ে শেষ হয়।
পরে বাগেরহাট স্বাধীনতা উদ্যান প্রাঙ্গনে বাংলা ১৪২২ নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান এবং বৈশাখী মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন করেন বাগেরহাট-৪ আসনের সাংসদ আলহাজ ডা. মোজাম্মেল হোসেন এমপি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, জেলা প্রশাসক ও মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যাসহ সর্বস্তরের শ্রেণীপেশার নেতৃবৃন্দ।
এদিকে বর্ষবরণ ১৪২২ উপলক্ষে মেলা চলাকালিন প্রতিদিন সন্ধায় বাগেরহাট স্বাধীনতা উদ্দানের বিজয় মঞ্চে সাংকৃতিক অনুষ্ঠানের আয়াজন করেছে জেলা প্রশাসন। এতে অংশ গ্রহণ করবে জেলার ১৯টি সংকৃতিক সংগঠন।
এছাড়া ভোরে বাগেরহাট শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে, শোভাযাত্রা শেষে পূরতন কোর্ট চত্তরেসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নানা সামাজিক-সংকৃতিক সংগঠন আয়াজন করেছে ঐতিহ্যবাহী খাবার, পিঠা ও সংকৃতিক অনুষ্ঠানের।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, নববর্ষ উপলক্ষে ৭দিনের কর্মসূচিতে কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হবে। পহেলা বৈশাখ দিনব্যাপী সবার প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বাগেরহাট যাদুঘর।
উপজেলা শহরগুলো ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী মেলা ও লোকজ অনুষ্ঠানের।
এদিকে বৈশাখের সাথে মিশে থাকা বাঙালি চিরায়ত ঐতিহ্য হালখাতা চোখে পড়ে শহরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠারে।
বাংলা বর্ষের সূচনা-
ইতিহাস বলে, রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্রাট আকবরের যুগে প্রবর্তন হয়েছিল বাংলা সালের। ষোড়ক শতকে আকবর ‘ফসলী সন প্রবর্তনের মাধ্যমে যে বাংলা সাল চালু করেছিলেন সময়ের বিবর্তনে সেই দিনটি এখন বাঙালির প্রাণের উৎসব পরিণত হয়েছে।
আকবরের নবরত্নসভার আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজি খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য হিজরি চান্দ্রবর্ষকে সৌরবর্ষের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে ফসলি সালের গণনা শুরু করেছিলেন।
তিনিই হিজরিকে বাংলা সালের সঙ্গে সমন্বয় করে বৈশাখ থেকে বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেছিলেন। বৈশাখ নামটি নেওয়া হয়েছিল নক্ষত্র ‘বিশাখা থেকে।
ইতিহাসের পাতা উল্টে জানা যায়, পয়লা বৈশাখে আকবর মিলিত হতেন প্রজাদের সঙ্গে। সবার শুভ কামনা করে চারদিকে বিতরণ হতো মিষ্টি। এরপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে বর্ষবরণ উৎসব চলে আসে জমিদার বাড়ির আঙিনায়। খাজনা আদায়ের মতো একটি রসহীন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় গান বাজনা, মেলা আর হালখাতার অনুষ্ঠান।
আজ আর খাজনা আদায় নেই, কিন্তু রয়ে গেছে উৎসবের সে আমেজ। সেটা এখন ছড়িয়ে পড়েছে শহর বন্দর আর গ্রামে, জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সব বাঙালির মাঝে।
এই বিশেষ দিনে বাগেরহাট ইনফো পরিবারের পক্ষ থেকে সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। “শুভ নববর্ষ ১৪২২”।