উত্তেজিত হয়ে বাগেরহাটের মোল্লাহাটে আক্রমণ চালিয়ে তিন ব্যক্তিকে হত্যা করা হাতিটি সরিয়ে না নেওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরজ করছে।
শনিবার ভোর আক্রমণকারী হাতিটি নারীসহ তিন জনকে হত্যা এবং কমপক্ষে ৭টি বসতঘর ভাঙচুর করে। এর পর থেকে রোববার (২৪ মে) বিকাল পর্যন্ত মোল্লাহাট উপজেলার আটজুড়ি ইউনিয়নের বাসাবাড়ি গ্রামের একটি বাঁশ বাগানে অবস্থান করছে হাতিটি।
ঘটনার ৩৫ ঘন্টা পরও সার্কাসের ওই হাতির মালিকপক্ষ ও প্রশাসন তাকে সরিয়ে নিতে না পারায় আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয় মানুষের মনে।
শনিবার (২৩ মে) ভোরে উত্তেজিত হয়ে পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ জেলার গুনাপাড়া থেকে শেকল ছিড়ে বাগেরহাটের মোল্লাহাটের দিকে ছুটে আসে হাতিটি। হামলা চালায় উপজেলার গারফা ও আড়জুড়ি গ্রাম ছাড়াও আরও কয়েকটি গ্রামে। নিহত হন তিন জন।
শনিবার রাতে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
তবে, এ ঘটনায় থানায় রোববার বিকাল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট থানায় কোনো মামলা হয়নি।
আটজুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক মোল্লা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বাসাবাড়ি গ্রামের আবুল হোসেনের বাড়ির বাঁশ বাগানে হাতিটি এখনও আছে। ঘটনার পর থেকে কাহালপুর ও বাসাবাড়ি গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তিনি অভিযোগ করেন, হাতির মালিকপক্ষ এখনও তাকে সরিয়ে নেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমানে হাতিটিকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে, এতেও ওই এলাকার মানুষ পুরোপুরি নিরাপদ নয়।
যেকোনো সময়ে হাতি আবার শিকল ছিড়ে আক্রমন চালাবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে (?)। তাই দ্রুত ওই হাতিটিকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
আটজুড়ি ইউনিয়নের সংরক্ষিত (১.২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের) নারী ইউপি সদস্য তাসলিমা বেগম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, হাতির আক্রমনে আমার ওয়ার্ডের কাহালপুর গ্রামের কুসুম বিশ্বাস ও মিজানুর রহমান ফকির নিহত হয়েছেন। মিজানুর রহমানের মৃত্যুতে তার পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে।
নিহত মিজানুর তার পরিবারে একমাত্র উপার্জনাক্ষম ছিলেন। তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের দেখার আর কেউ নেই। তাই এই পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করার দাবি জানান তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, ৩৫ ঘণ্টা পার হয়ে গলেও হাতির মালিক পক্ষ হিংস্র হাতিটিকে সরিয়ে নেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ন ম খায়রুল আনাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ওই পুরুষ হাতিটিকে সরিয়ে নিতে মালিকপক্ষকে ঢাকা থেকে তার সঙ্গী স্ত্রী হাতিটিকে আনার জন্য বলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পুলিশ বাসাবাড়ি গ্রামের আবুল হোসেনের বাঁশ বাগান ঘিরে রেখেছে।
হাতিটি যাতে নতুন করে আবার কাউকে আক্রমন করতে না পারে সেজন্য ওই বাগানে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে পুলিশ পাহারা বসিয়েছে।
হাতিটিকে মালিক পক্ষ যতক্ষণ না সরিয়ে নিচ্ছে ততক্ষণ পুলিশ গ্রামবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাহারা দিবে বলে ওসি জানানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, নিহত তিনজনের মধ্যে দুই পরিবার মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে রাজি না হওয়ায় একজনের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। নিহতদের কোনো পরিবার এখনও মামলাও করতে আসেনি।