বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় পুলিশের মারধরে আরিফ হোসেন দুলাল (৪০) নামে এক কলেজ শিক্ষক গুরুতর আহত হয়েছেন।
এ সময় ঠেকাতে এসে ওই শিক্ষকের স্ত্রী শাহীনা বেগম (৩৫) ও ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র আশরাফুল ইসলাম লিপনও (১৪) আহত হয়।
রোববার (৫ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলা সদরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে ওই কলেজ শিক্ষকের বাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত আরিফ হোসেন দুলাল তাফালবাড়ী স্কুল এন্ড কলেজের কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক।
পুলিশ আরিফ ও লিপনকে পেটানোর পর থানায় নিয়ে ফের নির্যাতন করে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, কম্পিউটার শিক্ষখ আরিফ উপজেলা সদরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বসবাস করেন। সাম্প্রতি তিনি সেখানে পাকা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। রোববার বিকেল ৩টার দিকে প্রতিবেশী আবুল কালাম ফরেস্টারের অভিযোগের ভিত্তিতে শরণখোলা থানা পুলিশের এসআই মাহাবুবের নেতৃত্বে দুই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজে বাধা দেয়।
এতে তাদের ( আরিফ ও পুলিশ সদস্যদের) মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয়।
আরিফের বাবা মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলী হাওলাদার জানান, পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে তার ছেলে আরিফ, ছেলের বৌ ত্রী শাহীনা ও লিপনকে মারধর করে। এরপর থানা থেকে আরো ৭/৮ পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের ওপর চড়াও হয়।
পরে আরিফ ও লিপনকে থানায় নিয়ে পুনরায় মারধর করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এসময় সাংবাদিক ও শিক্ষকসহ কাউকে থানার অভ্যন্তরে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ ।
এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদ ও তাদের মুক্তি দাবিতে সন্ধ্যায় শিক্ষক-ছাত্র ও স্থানীয় শত শত জনতা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ বিক্ষভ করে।
অন্যদিকে ঘটনার জন্য দায়ি পুলিশের শাস্তি দাবিতে উপজেলা শিক্ষক সমিতি সকল মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছে।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ অতুল মন্ডল থানায় এসে আরিফ ও লিপনকে চিকিৎসার জন্য শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্রুত গাড়িতে করে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
পরে রাত ৮টায় সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে আরিফের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানতে পারেন।
আরিফ জানান, পুলিশ সদস্যদের তিনি মারধর করেননি। এটা তাদের সাজানো নাটক। তবে পুলিশের দাবি তাদের হামলায় এক এসআইসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
শরণখোলা থানার ওসি মো. রেজাউল করিম দাবি করেন, আরিফ ও তার প্রতিপক্ষ আবুল কালাম আজাদের সাথে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষ বাধে। এই খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে আরিফ ও তার স্ত্রী-পুত্র পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
এতে এসআই মাহবুব হোসেনকে আহত হয়ে শরণখোলা হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে দুই জনকে আটক করা হয়।
এব্যাপারে ইউএনও মোহাম্মদ অতুল মন্ডল জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রনে রয়েছে এবং আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমদ্দার জানান, আরিফের ডান হাত ও বাম পা ভেঙেছে মনে হওয়ায় এক্স-রে করতে বলা হয়েছে। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানেও গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মেদ জানান, ঘটনার সুষ্ট বিচার ও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করা না হলে ৬ এপ্রিল থেকে শরণখোলার সকল স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা অনিদিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এব্যাপারে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নিজামুল হক মোল্যা জানান, তিনি ঘটনা শুনেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।