বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী গোপাল চাঁদ স্নান ও মহামেলা।
বুধবার (০১ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া ৯৪তম এ মেলায় দেশী-বিদেশী দুই লাখ লোকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা
মেলার ১ম দিন বুধবার (০১ এপ্রিল) মদন ত্রয়োদশী তিথিতে অনুষ্ঠিত হবে বারুণী স্নান। দেশের অভ্যান্তরীন তালিকাভূক্ত ৪শ’টি দলের ১ লাখ ভক্ত ইহজাগতীক পাপ মোচন ও পারামার্থিক কল্যান লাভের জন্য একযোগে এ স্নানে অংশ নেবে।
শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২০৪তম জন্ম স্মরণে বাংলা ১৩২৮ সাল থেকে মোরেলগঞ্জ উপজেলার লক্ষীখালী গ্রামে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যা এখন ‘গোপাল সাধুর’ মেলা নামে পরিচিত।
ভ্রম্মচারী শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর বাংলা ১২১৮ সালে বৈশাখী পূণিমায় সোমবার গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে জন্ম গ্রহন করেন। ধর্মীয় মতাদর্শে হরিচাঁদ ঠাকুর ওড়কিান্দি থেকে বঙ্গভারত উপমহাদেশের শোসন নিস্পেশন বিরোধী ও গণমানুষের মুক্তির আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অঞ্চলে লাখ লাখ ভক্ত অনুসারী তৈরী হয় তার। যারা এখন মতুয়া সম্প্রদায় নামে পরিচিত।
মতুয়া ভক্তরা প্রতি বছর মধুকৃষ্ণা পূর্ণিমার ত্রয়োদশী তিথিতে ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মোৎসব পালন করেন। যা এখন বারুণী স্নান ও মহামেলা নামে পরিচিত। ওড়াকান্দি মেলার ১৫দিন পরে ঠাকুরের দোয়ালীয়া বাড়ি গোপাল চাঁদের লীলা নিকেতন মোরেলগঞ্জের লক্ষীখালীতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে বারুণী স্নান।
প্রায়ত গোপাল সাধুর ২৪ বিঘা জমি নিয়ে বসতবাড়িতে বসবে এ মেলা। মেলা ও স্নান নিয়ন্ত্রনের জন্য পুলিশ, আনছার ভিডিপি ছাড়াও স্থানীয় ২শ’ জন স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত রয়েছে।
গোপাল সাধুর এ লীলা ধামে এ পর্যন্ত ৪ পুরুষ গত হয়েছে। বর্তমান গদিনশীন তরুণ সেবাইত সাগর সাধু ঠাকুর বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বিগত বছরগুলোয় লক্ষীখালীর এ মেলায় বর্তমান ক্রীড়া মন্ত্রী বীরেন শিকদার, সাবেক ত্রান ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল খালেক তালুকদার, সমাজকল্যান প্রতিমন্ত্রী ডা. মোজাম্মেল হোসেন, ভারতীয় বিধান সভার তৎকালীন এমএলএ হরিপদ বিশ্বাস, পশ্চিমবঙ্গের এমএলএ আশালতা মজুমদার, ত্রিপুরার শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রী অনীল সরকার, বনগা লোকসভার এমপি সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর ও বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি মতুয়াচার্য শ্রীশ্রী হিমাশুপতি ঠাকুর যোগ দিয়েছেন।
গোপাল সাধুর এ মেলা সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও হিন্দু, মুসলিম,বৌদ্ধ, খৃষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে জমায়েত হয়। সার্ক ভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে ভারত, ভুটান ও নেপালের ৪০ থেকে ৫০টি দল বিগত বছরগুলোয় অংশ গ্রহন করেছে। বর্তমানে ভিসা ও বর্ডার জটিলতার কারনে শুধুমাত্র ভারতের কয়েকটি অংশ গ্রহন করবে বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীখালীর এ মেলাকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কমপক্ষে ২ হাজার দোকানী (স্টল বসেছে) এসেছে। রয়েছে নাগরদোলাসহ গ্রাম বাংলার বিভিন্ন লোকজ ঐতিহ্যের পণ্যের পসরা।
মোরেলগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, মেলায় আগতদের নিরাপত্তা ও শৃংখলা রক্ষার জন্য পুলিশের একাধিক দল সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করছে।