বাগেরহাটের রামপালে এক বিধবা নারীকে (৩২) অপহরণের পর নৌকায় নিয়ে চার যুবক গনধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পওয়া গেছে।
ঘটনার ৬দিন পর মঙ্গলবার রাতে রামপাল উপজেলার কুমারখালী গ্রাম থেকে স্থানীয় গ্রামবাসীর সহযোগিতায় পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার করেছে।
গত বৃহষ্পতিবার (১২ মার্চ) গভীর রাতে রামপাল উপজেলা পেড়িখালী ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামের কালিগঞ্জ নদীতে এই ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে তিনি।
বুধবার (১৮ মার্চ) দুপুরে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ওই নারীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
এঘটনায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় ধর্ষণের শিকার ওই নারীর দেবর (অনুপ রায়) বাদী হয়ে রামপাল থানায় অজ্ঞাতনামা চার যুবকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন।
খবর পেয়ে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এনামুল হক মিঠু ওই নারীকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান এবং তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী রাতে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা গ্রামে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এসে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার শিয়ালীডাঙ্গা গ্রামের এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার ওই নারী বুধবার সকালে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, গত বৃহষ্পতিবার বিকেলে রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের বড় সন্নাসী ফুলতলা পাড়া গ্রাম থেকে আমি ও আমার দেবর দু’জনে পাশ্ববর্তি ডাকরা গ্রামের মহানামযজ্ঞে (ধর্মীয় অনুষ্ঠানে) যাই। সেখানে গান শোনার এক পর্যায়ে রাত দশটার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বাথরুমে আসলে অন্ধকারে আগেই ওৎত পেতে থাকা কয়েক যুবক আমাকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। তখন আমার সঙ্গে থাকা দেবর তাদের বাধা দিতে গেলে ওই যুবকরা তাঁকে বেদম প্রহার করে ফেলে রেখে আমাকে তুলে নদীতে একটি নৌকায় নিয়ে যায়।
সেখানে নিয়ে তারা আমাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে আমি অচেতন হয়ে পড়ি। অসুস্থ অবস্থায় পরে তারা আমাকে পাশ্ববর্তি কুমারখালী গ্রামে আমার এক বোনের বাড়িতে নিয়ে রেখে দেয়। আমি যাতে এই বিষয়টি কাউকে না জানাতে পারি সেজন্য গত বৃহষ্পতিবার রাত থেকেই ওই যুবকরা আমাকে এখানে নজরবন্দি করে রাখে।
কিন্তু মঙ্গলবার আমার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তালুকদার নাজমুল কবীর ঝিলাম ঘটনাটি লোকমূখে জানতে পেরে তার লোক পাঠিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী ও পুলিশের সহযোগিতায় আমাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে।
তিনি আরও বলেন, ওই যুবকদের মারপিটে আহত সুদেব হালদার বর্তমানে মংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার নাজমুল কবীর ঝিলাম বলেন, ডাকরা গ্রামের কতিপয় যুবক আমার ইউনিয়নের স্বামীহারা এক নারীকে অপহরণ করে গনধর্ষণ করে অবরুদ্ধ করে রেখেছে এই সংবাদ জানতে পেরে আমার লোকজন সেখানে যায়। আমার লোকজনের উপস্থিতি টের ওই যুবকরা পালিয়ে গেলে তাঁকে উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিও জানান তিনি।
মামলা তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবুল বাশার বলেন, ওই নারীর ডাক্তারী পরীক্ষার পর তার জবানবন্দি নেয়া হবে। ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করতে তদন্ত শুরু করেছি।
এবিষয়ে রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ধর্ষণের শিকার ওই বিধবা নারীকে উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চার যুবকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। ওই চার যুবকের পরিচয় পাওয়া গেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।