বাগেরহাটের মংলায় সেনাকল্যাণ সংস্থার সিমেন্ট কারখানায় নির্মাণাধীন ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে আরো একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ নিয়ে এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতজনে। ‘মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি’নামের ওই কারখানার ধসে পড়া স্থাপনার নিচে এখনও অনেক শ্রমিক আটকা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয় বলে মংলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মঞ্জুর এলাহী জানিয়েছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের পরিচয় জানা যায়নি।
রাতভর সেখানে উদ্ধার কাজ চালানো হয় বলে মংলা থানার এসআই মঞ্জুর এলাহী জানান। উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মংলা শিল্প এলাকায় বাংলাদেশ সেনা কল্যাণ সংস্থার মালিকানাধীন ‘এলিফ্যান্ট ব্রান্ড’ সিমেন্ট কারখানার নির্মাণাধীন ওই মিলিং হাউজের ছাদ ধসে পড়ে।
এরপর রাত ১১টা পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ছয়টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতদের মধ্যে তিন শ্রমিকের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন- বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা গ্রামের আমীর আকুঞ্জী, একই উপজেলার রাজনগর গ্রামের মাহরুফ হাওলাদার এবং খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের আল আমিন।
এছাড়া আহত অর্ধশতাধিক শ্রমিককে মংলা বন্দর হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভবন ধসে শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিতেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে বলে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ঘটনা তদন্তে খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ফারুক হোসনকে প্রধান করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ কমিটিতে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ও একজন প্রতিনিধি, খুলনা গণর্পূত বিভাগের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক এবং নির্বাহী প্রকৌশলী, সেনাকল্যাণ সংস্থার একজন প্রতিনিধি, খুলনা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক, খুলনা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক, কোস্ট গার্ডের একজন প্রতিনিধি থাকবেন।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ওই মিলিং হাউজের ছাদ ঢালাই শুরু হয়। ভবনটি প্রায় চার তলা ভবনের সমান উঁচু। শতাধিক শ্রমিক সে সময় কাজ করছিলেন।
“বেলা ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে কোনো এক সময়ে ঢালাই চলা অবস্থায় ছাদটি ধসে পড়ে। এতে বেশ কিছু শ্রমিক লোহার সেন্টারিং পাইপ, রড ও ঢালাই সামগ্রীর মধ্যে আটকা পড়েন।”
দুর্ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ উদ্ধার কাজ শুরু করেন। ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া অর্ধ শতাধিক আহত শ্রমিককে তারা উদ্ধার করেন।
উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া খুলনা ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচারক মো. মিজানুর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, “ধ্বংসস্তূপে আরও অর্ধ শতাধিক শ্রমিক জীবিত বা মৃত অবস্থায় আটকে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
আহত শ্রমিক মাসুদ কাজী ও গোলাম মোস্তফা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ছাদের ওপর মশলা (ইট-শুরকির ঢালাই) দেওয়া হচ্ছিল। কাজ অর্ধেকটার বেশি এগিয়েও গিয়েছিল। হঠাৎ করেই বিকট শব্দে সব কিছু ভেঙে পড়ে।
ভবন ধসের খবর পেয়ে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ, যশোর সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমান, বাগেরহাটের পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্লা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
দুর্ঘটনা তদন্তে সেনাকল্যাণ সংস্থা একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।