কথা ছিল কাজ শেষেই টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরবেন। ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলেন বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, দুই জমজ ছেলে ও মাধ্যমিক পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে।
কিন্তু সবার অপেক্ষা উপেক্ষা করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন মাহারুফ শেখ। সংসার খরচের টাকা নিয়ে আর ফেরা হলো না তার।
বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) দুপুরে বাগেরহাটের মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ভবন ধসে মাহারুফের মৃত্যু হয়। মাহারুফের বাড়ি বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার রাজনগর গ্রামে।
এদিকে, প্রিয়জনের মৃত্যুর খবর শুনে পরিবারের সদস্যরা ও প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন মংলা পোর্ট হাসপাতালে।
শুক্রবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মাহারুফের মা ও স্ত্রী-সন্তানদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস।
কথা হয় মাহারুফের বৃদ্ধ মা রহিমা বেগমের সঙ্গে। বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ে খানিকটা থেমে-থেমে তিনি বলেন, ২৫ দিন আগে এখানে কাজে আসেন মাহারুফ। কাজ শেষে পারিশ্রমিকের টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু তার সন্তান আর বাড়ি ফিরতে পারেনি।
নিহতের স্ত্রী খাদিজা বাকরুদ্ধ সন্তানদের জড়িয়ে কান্নারত অবস্থায় বলেন, কে ওদের দেখবে। বাড়ির সামান্য জায়গাটুকু ছাড়া কোনো অর্থসম্পদ নেই তাদের। কিভাবে কাটবে তাদের দিন।
বাবাকে হারিয়ে বিলাপ করে মেয়ে খাদিজা (১৫) ও জমজ দুই ছেলে একরামুল ও হাকিম (৯) বিলাপ করে বলছিল, আব্বা তুমি আমাদের এভাবে রেখে চলে গেলে। ঢালাইয়ের কাজ শেষে বাড়ি টাকা নিয়ে আসবে, বাজার নিয়ে আসবে। কিন্তু আজ তুমি আমাদের এভাবে এতিম করে চলে গেলে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সেনা কল্যাণ সংস্থা পরিচালিত মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরির নির্মানাধীণ ভবনের ছাদের ঢালাই চলাকালে পাইলিং ধসে পড়ে। এতে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। হতভাগ্যদের একজন মাহারুফ শেখ। এছাড়া ৪৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেন ফায়ার সার্ভিসের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ডিজি) মিজানুর রহমান।