বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে অগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখায় গ্রাহকদের নামের লোন নবায়ন করে কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
গ্রাহকের লোনের কিস্তির টাকা লেজারে জমা না করিয়ে নিজেদের পকেটে জমা করারও অভিযোগ রয়েছে ওই চক্রের কোন কোন ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
এদিকে এ ঘটনায় অগ্রনী ব্যাংক মোরেলগঞ্জ শাখার গ্রহকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা এখন ব্যাংকে ভীড় করছেন নিজেদের অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ এষ্টেটমেন্ট হাতে নেওয়ার জন্য।
জানা গেছে, সম্প্রতি অগ্রনী ব্যাংক মোরেলগঞ্জ শাখায় নতুন ম্যানেজার হিসেবে সুভাষ কুমার কুন্ডু যোগদানের পর বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে। প্রথমে তার নজরে আসে মোহাম্মদীয়া ষ্টোরের নামে ৫লাখ টাকা লোনের বিষয়টি। লেজারে দেখা যায় মোহাম্মদীয়া ষ্টোরের মালিক নজীর আহমেদ (সিসি লোন নং-১) কিস্তি খেলাপী তালিকায়। ম্যানেজার তাকে খুজিয়ে ব্যাংকে হাজির করান।
৫ লাখ টাকা লোনের কথা শুনে হতবাক হয়ে যান ব্যাবসায়ী নজীর আহমেদ। একই ভাবে (সিসি ৩০নং) লোন নবায়ন করে ৫লাখ টাকা তোলা হয়েছে রবি ষ্টোরের নামের।
‘মেডু’ লোন গ্রহিতা এনায়েত ফকির এর নামে লোন নবায়ন দেখিয়ে তোলা হয়েছে ৪৯ হাজার ৫শ’ টাকা। মেডু লোন গ্রহিতা বলাই লাল ভৌমিকের নামের একাউন্ট থেকে জান্নাতী গার্মেন্টস্ এর চেক ব্যবহার করে তুলেছে ৫২ হাজার টাকা।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, গত ২ বছর ধরে এ শাখায় চলছে এমন অনৈতিক কান্ড। আর এর সাথে জড়িত রয়েছেন মোরেলগঞ্জ শাখার খোদ ম্যানেজারসহ ৩/৪জন পদস্থ কর্মকর্তা। ব্যাংকের সুনাম ক্ষুন্ন হবার মত এই ঘটনাগুলো নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটানো ধরা পড়েছে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন কম্পিউটারে মোহাম্মদীয়া ষ্টোরের সিসি লোন নং-১ থেকে ৫লাখ টাকা ডেবিট করে সিসি লোন নং-৩৪ এ ২ লাখ ও আইরিন গার্মেন্টস্ এর নামে ৩ লাখ টাকা ক্রেডিট দেখায়।ৱ
এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়ে তৎকালীন ম্যানেজার মিসেস শাফিয়া বেগম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, আমি কম্পিউটারের কাজ বুঝিনা। অফিসার ক্যাশ সৈয়দ শিয়ন সাইফ এ কাজগুলো করেছেন। এ বিষয়ে শিয়ন সাইফ বলেন, টাকা আত্মসাৎ নয়, কিছু ভুল হয়েছে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
ব্যাংকের বর্তমান ম্যানেজার সুভাষ কুমার কুন্ডু বলেন, এ ঘটনার জন্য গ্রাহকদের কোন সমস্যা হবেনা, ব্যাংক কর্তৃপক্ষই টাকা জমা করে দিবে।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জোনাল শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এজিএম এসএম সোলায়মান বলেন, গ্রহকদের অজান্তে তাদের লোন নবায়ন করে টাকা তোলার বিষয়টির তদন্ত চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধীক কর্মকর্তা বলেন, সিসি ও মেডু মিলিয়ে ৭/৮ টি একাউন্ট থেকে গ্রহকদের অজান্তে টাকা তোলা হয়েছে। জালিয়াতি, বিশ্বাস ভঙ্গ ও অফিসিয়াল নিয়মের বাইরে এভাবে কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলেও তারা জানান।
ঘটনাটি শোনার পরে অগ্রনী ব্যাংক খুলনা সার্কেলের এজিএম কাওসার আহমেদ, বাগেরহাট মেইন শাখা ম্যানেজার (এসপিও) দিলীপ কুমার মন্ডল ও খুলনা সার্কেলের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার শান্তি দাস মোরেলগঞ্জ শাখা পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শক দলের প্রধান কাওসার আহমেদ বলেন, মোহাম্মদীয়া ষ্টোরের মালিক নজির আহমেদের সাথে কথা বলেছি। তিনি নির্দোষ। তিনি লোন নবায়ন করে টাকা গ্রহন করেননি। তাকে কোন টাকা পরিষোধও করতে হবেনা। কয়েকজন কর্মকর্তা পরিকল্পিতভাবে জালিয়াতির আশ্রয়ে ও বিশ্বাস ভঙ্গ করে গ্রাহকের নামে লোন নবায়ন করে টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এ ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে আমরা কাজ করছি। তদন্তের সার্থে খুলনা জোনাল এজিএম কাওসার আহমেদ আর কিছু বলতে রাজি হননি।