বাগেরহাটের শরণখোলা থানা পুলিশের এক এসআই ও কনস্টেবলের বিরুদ্ধে দস্যু ও মাদক বিক্রেতাদের সাথে সখ্যতাসহ ক্ষমতার ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিরিহ মানুষকে হুমকি দিয়ে এবং মিথ্যা মামালার ভয় দেখিয়ে ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গাজী ইকবাল ও কনস্টেবল কৌশিক (কং নং-৫৭৮)অনৈতিক সুবিধা লুফে নিচ্ছেন। তাদের ক্ষমতার হাত এতোটাই লম্বা যে, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও কেউ কিছু করতে পারবেনা বলে হরহামেশাই তাদেরকে এমন দাম্ভিক কথা বলতে শোনা যায়। তাদের এমন বেপরোয়া বিচরণ উপজেলার সর্বত্র।
এসআই গাজী ইকবাল দ্বিতীয় দফা শরণখোলা থানায় কর্মরত থাকার সুবাদে অনেক কিছুই তার নখদর্পনে। সুন্দরবনের বনদস্যু ও এ অঞ্চলের মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে অপরাধ জগতের গডফাদারদের সঙ্গে রয়েছে তার গভীর সখ্যতা।
অপরাধ জগত থেকে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবল প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এসআই গাজী ইকবালের বিরুদ্ধে তাদের কিছু কথিত সোর্স (তথ্যদাতা) এর মাধ্যমেও নানা অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজে মাদকাশক্ত হয়ে মানুষের সাথে যাতা ব্যবহার করেন। তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এখন মাদকে সয়লাব শরণখোলা বলেও চাউর আছে।
এদিকে গাজী ইকবালের এমন কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ থানার অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে গোটা পুলিশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওই কর্মকর্তা ও কনস্টেবলের কথিত সোর্সের (তথ্যদাতা) দ্বারা প্রতিনিয়ত তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পুলিশের নামে দাবীকৃত চাঁদার টাকা কিংবা মালামাল কেউ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে সোর্সের নির্যাতন ও পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের।
তারা জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের বাসিন্দা শামসুল হক মাতুব্বরের ছেলে বারেক মাতুব্বর (৩৫) শরণখোলা হাসপাতাল গেট সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশে বসে স্ট্রবেরী ফল বিক্রি করছিলেন। ওই সময় পুলিশের কথিত সোর্স মিজানুর রহমান মিজু তার ঝুড়ি থেকে জোর করে স্ট্রবেরী ফল তুলে নিলে ওই ফল বিক্রেতা তাকে বাঁধা দেন।
এতে ক্ষীপ্ত হয়ে মিজু (সোর্স) ঝুড়ির সমস্ত ফল রাস্তায় ফেলে দেন। তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করেন। এখানে ফল বিক্রি করতে হলে তাকে প্রতিদিন ৫০০টাকা দিতে হবে বলেও ওই বিক্রেতাকে হুমকি দেন তিনি।
পুলিশের ওই সোর্সের এমন ঔদ্যত্তপূর্ণ আচারণে আশপাশের ব্যবসায়ী ও পথচারীরা হতবাক হয়ে যান। পুলিশের ওই কর্মকর্তার ক্ষমতায় মিজু এমনটি করতে সাহস পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা।
এঘটনার কয়েকদিন আগে ওই সোর্স হান্নান হাওলাদার নামের এক টমটম (নসিমন) চালককে লাঠি দিয়ে বেদমভাবে পেটায়। মারের চোটে হান্নান দৌড়ে পাশের একটি দোকানে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পাননি তার মারের হাত থেকে। এসআই গাজী ইকবালের সোর্স বলে কেউ তার প্রতিবাদও করতে সাহস পায়নি।
কথিত আছে, এসআই গাজী ইকবাল এমনই এক কর্মকর্তা থানায় যখন যে ওসি আসেন তখন তার সবচেয়ে আস্তাভাজন হয়ে যান। তার এবং ওই কনস্টেবলের দাপটে থানার অন্য কর্মকর্তা ও কনস্টেবলরা কোনঠাসা হয়ে পড়েন। তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষতো দুরের কথা থানার কোনো কর্মকর্তাও মুখ খুলতে সাহস পায়না।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে, শরণখোলা থানা পুলিশের কয়েক জন অফিসার ও স্টাফ বলেন, গাজী ইকবাল ও কনেস্টবল কৌশিকের অনেক ক্ষমতা। তাদের হাত উপরমহল পর্যন্ত প্রসস্ত। তাদের ছত্রছায়ায় উপজেলার অনেক জায়গায় মাদক ব্যবসা চলছে। তাদের সোর্সরাও মাদকের সাথে জড়িত। তাদের কারনেই মাদক ব্যবসা নির্মূল করা যাচ্ছেনা বলেও তারা মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে জানতে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে এসআই গাজী ইকবাল ও কনেস্টবল কৌশিক তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, ‘সম্প্রতি সোর্স মিজুর কয়েকটি ঘটনা তাদের নজরে এলে তাকে থানা থেকে বের করে দেয়া হয়।’
এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছুটিতে থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো: আব্দুর রহমান এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।