বাগেরহাটে বিদ্যুতের ৯০ ফুট উঁচু টাওয়ার থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ইদ্রিস আলী হাওলাদার (৪৮) নামে এক দিনমজুর। (ভিডিওসহ)
মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাট গম্বুজ ইউনিয়নের বাজেয়াপ্ত সুন্দরঘোনা গ্রামের হয়রত খানজাহানের (র:) বসত ভিটায় এ ঘটনা ঘটে।
তবে, কী কারণে তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তা জানা যায়নি।
আহত ইদ্রিস আলী হাওলাদার (৪৮) ষাট গম্বুজ ইউনিয়নের মগরা গ্রামের আব্দুল মালেক হাওলাদারের ছেলে। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। ইদ্রিসের হাত, পা, মাথা, মুখ ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘটনাস্থালে গেলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইদ্রিস আকস্মিকভাবে টাওয়ারে উঠতে শুরু করেন। কয়েকজন প্রতিবেশী তাকে নিবৃত করতে ব্যর্থ হয়ে পরিবারের সদস্যদের খবর দেন। এর মধ্যে ইদ্রিস টাওয়ারের মাথায় উঠে যান।
স্থানীয় লোকজন ও তার স্বজনেরা দেখতে পেয়ে ছুটে এসে তাকে নিচে নেমে আসতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি কারো অনুরোধ শুনছিলেন না। নিচে নেমে আসবেন না বলে জানান। এসময় স্থানীয় কয়েক তরুণ তাকে উদ্ধার করতে ওই টাওয়ারে উঠে চেষ্টা করলে তিনি আত্মহত্যা করবেন বলে জানান।
একপর্যায়ে তারা ব্যর্থ হয়ে বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়।
ইদ্রিসকে উদ্ধার করতে যাওয়া বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ভক্ত বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইদ্রিসকে টাওয়ারের একেবারে উপরে বসে থাকতে দেখেন। বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে অনুরোধ করে তাকে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রায় এক ঘন্টাও তিনি কোনভাবেই সাড়া দিচ্ছিলেন না।
এ ঘটনা জানাজানি হলে শত শত মানুষ ভিড় করেন ওই এলাকায়। আসেন পুলিশ ও ফায়র সার্ভিস কর্মীরা।
এক পর্যায়ে দমকলকর্মীরা তাকে নামাতে টাওয়ারে ওঠা শুরু করলে তিনি কিছুক্ষণ তার ধরে ঝুলে থেকে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েন বলে জানান স্বপন।
প্রতক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা বলেন, প্রায় দেড়ঘণ্টাও বেশি সময় ধরে উৎকণ্ঠিত মানুষ ইদ্রিসকে টাওয়ার থেকে নেমে আসার অনুরোধ জানান। কিন্তু কারও কথায় কান না দিয়ে তিনি সেখান থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মনীষা মণ্ডলবাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ইদ্রিসের অবস্থা আশংকাজনক। তার হাত-পা, মাথা, মুখ ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত হয়েছে।
ডান হাত ও ডান পা ভেঙে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
তাদের প্রতিবেশী গোলাম রসুল, মোস্তাফিজ শেখ ও আলতাফ হোসেন জানান, বেশ কিছুদিন ধরে ইদ্রিস বেশ উত্তেজিত থাকতেন। গত এক বছরের মধ্যে তিনি ফাঁস দিয়ে ও বিষা পান করে দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
এমনকি মঙ্গলবার সকালেও তিনি বটি দিয়ে নিজের গলা কাটার চেষ্টা করেন। এ সময় তার স্ত্রীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাকে নিবৃত করে।
তবে এই আচরণের কোনো কারণ তারা বলতে পারেননি। আহত ইদ্রিস আলীর পরিবার জানিয়েছে, মানষিক অশান্তিতে ভুগছিলেন তিনি।
এদিকে, এতো উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়ার ঘটনায় হতবাক হয়েছেন আশপাশের সবাই। ঘটনাস্থালে ছুটে আসা আশপাশের শত শত উৎসুক মানুষ ধরণা করেছিলেন সম্ভাবত তিনি আর বেঁচে নেই।
লাফিফে পড়ে আত্মহত্যা চেষ্টার এই দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন উৎসুক কয়েক জন নারী ও শিশু। স্থানীয় অনেক নারী-পরুষ ও শিশুর মতোন অসুস্থ হয়ে পড়েন ঘটনাস্থলের পাসে খানজাহানের বসত ভিটাতে খনন কাজে তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রত্নতত্ব বিভাগের সহকারী পরিচালক একেএম সাইফুর রহমানও। ছুটি ঘোষনা করা হয় মঙ্গলবারের খনন কাজের।
তার পরিবারেও চলছিল কখন শোকের মাতন। এমনি সময় খবর আসে গুরুত্ব আহত ইদ্রিস আলী হাওলাদার বেঁচে আছেন।
এসময় উপস্থিত অনেকেই সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “রাখে আল্লাহ্ মারে কে?”
বাগেরহাট ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল হক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ইদ্রিস যে টাওয়ার থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন সেটি এক লাখ ৩২ হাজার কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। জাতীয় গ্রিডের এই লাইনটি খুলনা থেকে বাগেরহাটের উপর দিয়ে পিরোজপুরের দিকে গেছে।
আশি থেকে নব্বই ফুট উচ্চতার এসব টাওয়ার অত্যান্ত বিপজ্জনক বলে জানান তিনি।