দীর্ঘ ১০ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন।
শনিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) শহরের খানজাহান আলী ডিগ্রী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে এই সম্মেলন।
২০ দলীয় জোটের চলমান সরকার বিরোধী সহিংস কর্মসূচির মধ্যে বিশেষ মাত্রা পেয়েছে এই সম্মেলন। এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে বাগেরহাটের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা।
সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াতসহ চার দলীয় জোট সরকারে সময়ে ২০০৫ সালের ৭ এপ্রিল বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দলের জেলা সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকু আবারও স্বপদে প্রার্থী হচ্ছেন।
দলের এই দুই শীর্ষ নেতা ছাড়াও সভাপতি পদে বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া) আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মীর শওকাত আলী বাদশা এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মুজিবর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকু জানান, সম্মেলন সফল করতে গত প্রায় এক বছর ধরে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের ৭০২টি ওয়ার্ড কমিটি, ৭৬টি ইউনিয়ন কমিটি ও ১১টি সাংগঠনিক থানা কমিটি পুনর্গঠণ করা হয়েছে। সম্মেলনে মোট কাউন্সিলর থাকছেন ২৯২ জন।
বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া পুরানো কাউন্সিলররা ঐতিহ্যগতভাবে এবারের সম্মেলনেও বহাল রয়েছেন।
এদিকে এই সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে যেমন রয়েছে আনন্দ উচ্ছ্বাস, তেমনি রয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাগেরহাটে ঠিকাদারী, টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অবৈধ পথে টাকার মালিক হয়েছেন দলের গুটিকয় চিহ্নিত ব্যক্তি। এ নিয়ে দুর্দিনের ত্যাগী কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
সম্মেলন নিয়ে তাদের মধ্যে আগ্রহ কম। তবে ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ক্ষমতাসীনদের অত্যাচার নির্যাতনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া এ সব নেতা-কর্মীরা নিকট ভবিষ্যতে আরো একটি কঠিন সংকট মোকাবেলার আশংকায় রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আ.লীগের একাধিক ত্যাগী কর্মী বলেন, ‘রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলায় ও দলকে সংগঠিত রাখতে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথেষ্ঠ যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। তারা অসংখ্য নির্যাতিত নেতা-কর্মীর পাশে দাড়িয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতায় যাবার পর তারা অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।’
চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিযুষ কান্তি রায় বলেন, ‘আমরা জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দলের বৃহত্তর স্বার্থে পুনরায় স্বপদে দেখতে চাই।’
মোল্লাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহিনুল আলম সানা বলেন, দেশ এখন কঠিন এক সময়ের মুখোমুখি। সাংগঠনিক প্রয়োজনে সম্মেলন হচ্ছে কিন্তু আমরা দলে কোন বিভক্তি চাই না। তাই বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেই পুনরায় দলের দায়িত্ব দিতে চাই।
ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন দাস বলেন, দলের দুর্দিনে বর্তমান নেতৃত্বের সাংগঠনিক দক্ষতার সুফল দল পাচ্ছে। এখন সেই ঐক্য ধরে রাখতে তাদেরই নেতৃত্বে থাকা প্রয়োজন। সম্মেলনের সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই তাদের পুনরায় নেতৃত্বে দেখতে চাই।
বাগেরহাট-২ আসনের এমপি মীর শওকাত আলী বাদশা বলেন, ‘কাউন্সিলররা সম্মেলনের প্রাণ। সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বলে কথা না, কাউন্সিলররা চাইলে যে কোন পদেই নির্বাচন করতে পারি। তারা চাইলে নাও করতে পারি। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে নতুন নেতৃত্ব দলকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে।’
তবে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী খান মুজিবর রহমান বলেন, ‘ডা. মোজাম্মেল ও শেখ কামরুজ্জামান টুকুর নেতৃত্বে আমি আস্থাশীল। তারা পুনঃনির্বাচিত হলে দলের মঙ্গল হবে। অন্যথায় আমি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হবো।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘টানা প্রায় ৩৫ বছর জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। জেল খেটেছি, সশস্ত্র হামলার শিকার হয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা ও দলীয় কর্মীরা সব সময়ে আমার উপর আস্থা রেখেছেন। তাঁরা চাইলে আমি আবার সভাপতি পদে দায়িত্ব নেবো।’
শনিবারের সম্মেলন সফল করতে দলের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক তোড়জোড়। খানজাহান আলী ডিগ্রী কলেজ মাঠ সংলগ্ন খুলনা-বাগেরহাট সড়কের প্রায় সাত কি.মি. অংশে অসংখ্য তোরণ বানানো হচ্ছে। প্রায় সাড়ে আট হাজার নেতা-কর্মী ও কাউন্সিলরদের দুপুরের খাবার আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনে প্রায় পনেরো হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অ্যাড. শাহ ই আলম বাচ্চু।
শনিবারের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরায়ুল ইসলামের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথিরা হলেন আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, অ্যাড. সুভাষ চন্দ্র বোস. এস এম কামাল ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক।