টানা অবরোধ আর দফায় দফায় হরতালের কারণে কমে গেছে মংলা বন্দরে আমদানি-রফতানি। সৃষ্টি হয়েছে আমদানিকৃত কনটেইনার জট।
সোমবার বিকাল পর্যন্ত বন্দরের জেটিতে আটকে আছে আমদানি করা ১ হাজার ৫৪ কনটেইনার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবরোধকারীদের পেট্রল বোমা আর আগুনের ভয়ে সড়ক পথে পরিবহনে নিরাপত্তার অভাবে তারা বন্দর জেটি থেকে পণ্য বাইরে নিতে পারছেন না। বিদেশি কাঁচামালের অভাবে বন্ধ হয়েছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। বেকার হয়ে পড়েছেন অনেক শ্রমিক।
লকপুর গ্রুপ এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও সাউথ বাংলা এ্যাগরিকালচার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এম আমজাদ হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তার ২৪ টি আমদানি ও রফতানি নির্ভর ব্যবসায়ীক প্রতিষ্টান রয়েছে । এর মধ্যে ১৩ প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কাঁচামাল ছাড়া চালানো সম্ভব না। প্রায় ১ মাস অবরোধ আর হতালের কারণে কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় ১৩ টি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এছাড়া বাকি ১১ টি প্রতিষ্ঠান তিন সিফটের স্থলে এখন ১ সিফট চালানো হচ্ছে।
এতে ব্যাপক ভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান।
বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কাঁচামাল তো জাহাজে নদী পথে আসবে। তাতে হরতাল-অবরোধে কি সমস্যা -এমন প্রশ্নে আমজাদ হোসেন বলেন, বিদেশ থেকে আসার পর ওই সব কাঁচামাল সড়ক পথে শিল্প প্রতিষ্ঠানে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিবহনের জন্য ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না। কোন ট্রাক মালিকই হরতাল অবরোধকারীদের ভয়ে ট্রাক রাস্তায় নামাতে সাহস পাচ্ছে না।
তিনি আরো জানান, মংলা বন্দরের জেটিতে তার প্রতিষ্টানের আমদানি করা অনেক কাঁচামাল আটকে আছে। নিরাপত্তার অভাবে তা শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিতে পারছেন না। তার নিজেরও পণ্য পরিবহনের জন্য ৩০ টি ট্রাক রয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার অভাবে তিনি তা রাস্তায় নামাচ্ছেন না। ফলে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। তিনি রাস্তার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
সাউদার্ন সি ফুডসের নির্বাহী পরিচালক মোঃ সফিউল্লাহ খান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সাড়ে ৮ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি স্টোরে মজুদ পড়ে আছে। যা ৮ জানুয়ারি শিপমেন্ট করার কথা ছিল। কিন্তু নাশকতার ভয়ে রাস্থায় কনটেইনারবাহী গাড়ি বের করতে সাহস পাচ্ছেন না।
আমদানি ও রফতানি কমে যাওয়ায় বন্দর শ্রমিকরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বন্দরের জেটি শ্রমিক সিদ্দিকুর রহমান জানান, অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে বন্দরের বাইরে পণ্য আনা-নেয়ার জন্য ট্রাকে ওঠানো-নামানো কাজের শ্রমিকরা বেশি বেকার হয়ে পড়েছেন। বিদেশ থেকে যে সব পণ্য আসছে তা জেটির শ্রমিকরা আনলোড করছেন। কিন্ত পরে তা বন্দরের বাইরে সড়ক পথে বিভিন্ন স্তানে পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে ট্রাকে ওঠানো নামানোর অন্তত ৩ শতাধিক শ্রমিক বেকার বসে আছেন।
মার্চেন্ট শ্রমিক সর্দার আফজাল হোসেন বলেন, বেকার হওয়া শ্রমিকরা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যে কোনো সময়ে কাজ চালু হতে পারে এ আশায় জীবিকার সন্ধানে তারা অন্য কোথাও যাচ্ছেন না। প্রতিদিনই জেটি গেটে এসে কাজের জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মোস্থাফা কামাল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, খুলনা, যশোর ও ঢাকা অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহার করেন। তারা সাধারণত পাট, পাটজাত দ্রব্য ও মাছভর্তি কনটেইনার রপ্তানির জন্য মংলা বন্দরে নিয়ে আসেন। কিন্তু বর্তমানে সড়কপথে এসব পণ্য পরিবহনে তারা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এতে একদিকে ব্যবসায়ীরা যেমন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন, তেমনি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মংলা বন্দরের ডাইরেক্টর ট্রাফিক কাজী মোক্তাদের বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, কয়েকদিন ধরে কিছু পন্য রফতানির অপেক্ষায় ছিল। সোমবার তা জাহাজে লোড করা হয়েছে। এখন রফতানির অপেক্ষায় ১৬৫ কনটেইনার বন্দরের জেটিতে রয়েছে। এছাড়া আমদানি করা ১ হাজার ৫৪ কনটেইনার বন্দরের জেটিতে আটকে আছে। যা স্থানীয় ভাবে সরবরাহ হতে সময় লাগছে। কারণ আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান হয়তো হরতাল-অবরোধের কারণে সড়ক পথে তাদের পণ্য নাশকতার ভয়ে নিতে সাহস পাচ্ছেন না। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান ঝুকি নিয়ে মাঝে মাঝে আমদানি করা পন্য সড়ক পথে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, বন্দরে জাহাজ আসলে যথারীতি পণ্য ওঠানামার কাজ চলে। দাফতরিক কার্যক্রমও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আমদানি-রফতানি কিছুটা কমেছে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।