রাজধানীর গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এবার খাবার সরবরাহও বন্ধ করে দেবার হুমকি দিয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
শনিবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে বাগেরহাটের রামপালে মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ রুটে বিদেশি ঠিকাদার চায়না হারবার এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর খনন কাজের উদ্বোধন করতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে খালেদা জিয়ার ওই কার্যালয়ে গত ৩ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে থাকা খালেদা গত ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে না পেরে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দেন।
খালেদার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রামপাল খেয়া ঘাটে দাড়িয়ে মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, “খালেদা জিয়ার বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ সরকার বিচ্ছিন্ন করেনি। আমাদের শ্রমিক-কর্মচারীরাই এটি বন্ধ করে দিয়ে।”
“দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি। শুধু তাই না, তার খাবারও আমরা বন্ধ করে দিব। খাবার নিয়ে সেখানে কেউ ঢুকতে পারবে না। আমার শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের হাতের টিফিন ক্যারিয়ার ছিনিয়ে নেবে, খালেদা জিয়াকে খেতে দেবে না। আমরা সমস্ত পোড়া গাড়ি নিয়ে তাকে ঘেরাও করবো। খুব শিগগিরই এই প্রোগ্রামটা আপনার দেখবেন।”
‘সরকারের এটা কিছুই কার নেই। সরকার এটা বলেনি। ডেসা বলেনি বিদ্যুৎ বন্ধ করেতে। আমারা নিজের দায়িত্বে, দায়িত্ব বোধ নিয়ে এটি বন্ধ করেছি।’
এর আগে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করা না হলে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হুমকি দিয়েছিলেন শাজাহান খান। এর পর এই দিন গভীর রাত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে হরতাল নিষিদ্ধের দাবির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে নৌমন্ত্রী বলেন, “ব্যবসায়ীরা এটা বলতেই পারেন। কিন্তু এর দায়-দায়িত্ব সরকার নেবে না। এর দায় খালেদা জিয়াকে নিতে হবে। কারণ তারা এগুলো শুরু করেছেন।”
“হরতাল অবরোধ আমারও করেছি কিন্তু তাতে আমরা সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারিনি। এটি (বিএনপি জোটের কর্মসূচি) কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।”
“এক সময় দেখেছি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দল আন্দোলন করে। এখন দেখছি তারা জনগণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। তা না হলে পেট্রোল বোমা মেরে তারা মানুষ হত্যা করছে কেন?”
শাজাহান খান বলেন, ২০১৩ সালে বিএনপির সহিংস কর্মসূচিতে ৫৮ জন গাড়ির ড্রাইভার-হেলপার, ১৭ পুলিশ ও তিনজন বিজিবি নিহত হয়েছে।
“দেড় বছর যেতে না যেতে আবার শুরু করেছে। সেই একইভাবে পেট্রোল বোমা মেরে তারা ১৬ জন ড্রাইভার-হেলপার এবং ৪২ জন সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে।”
মংলা-কুমারখালী-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের খনন কাজে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না হারবার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে’র অংশগ্রহণ উদ্বোধন করতে রামপালে আসা নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই এই নৌ চ্যানেলের খনন কাজ শেষ করার আশা প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের ড্রেজার ছিল না, আমরা অনেকগুলো ড্রেজার কিনেছি। সেগুলো কাজ করছে। বিদেশী ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই কাজ করছি।”
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাগেরহাট-৩ আসনের এমপি তালুকদার আব্দুল খালেক, বিআইডাব্লিউটিএ চেয়ারম্যান ড. সামছুদ্দোহা খন্দকার, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা ও চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হেলিকপ্টারে করে মাদারীপুর থেকে বাগেরহাটের রামপালে আসেন নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) এই আয়োজনে অংশ গ্রহন এবং ফিতা কেটে ড্রেজিংয়ের উদ্বোধন শেষে রামপাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন মন্ত্রী।