বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধ চলাকালে ২২ দিনে বাগেরহাট-খুলনা সড়কের ‘সোনাতলা থেকে বাগেরহাট সদর উপজেলার শ্রীঘাট’ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথে প্রায় ৮টি যানবাহন ভাঙচুর হয়েছে।
এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। কিন্তু গত সোমবার পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
ওই সড়কসংলগ্ন গ্রামগুলো থেকে দুর্বৃত্তরা রাতে বা খুব ভোরে আকস্মিকভাবে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে যানবাহন ভাঙচুর করে পালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ গত শনিবার (২৪ জানুয়ারি) দুর্বৃত্তরা একটি দূরপাল্লার বাস ও একটি ট্রাক ভাঙচুর করে। তবে শনিবারের ঘটনা ছাড়া এ সড়কের আর কোনো হামলার ঘটনায় মামলা করেনি পুলিশ।
মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা বলেন, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, পিরোজপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন গন্তব্যের ৭০০-৮০০ যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু এসব ঘটনায় পুলিশ কোনো হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট আন্তজেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মুজিবর রহমান বলেন, ওই ১২ কিলোমিটার এলাকা সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ও ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। সড়কের দুই পাশের বেশির ভাগ গ্রামে বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থকদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মেগনিতলায় রয়েছে জেলা জামায়াতের দলীয় কার্যালয়। কর্মী বেশি থাকায় জামায়াত-বিএনপি জোট জেলা শহর ছেড়ে তাঁদের অধিকাংশ রাজনৈতিক কর্মসূচি এই সড়কের দশানী, বাদামতলা, মাজার মোড়, সুন্দরঘোনা, রণবিজয়পুর, শ্রীঘাট এলাকায় করে থাকে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকার ওপর বিশেষভাবে নজর রাখতে পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে। এসব এলাকা থেকে একের পর এক যানবাহনে হামলা চালানো হলেও পুলিশ কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারছে না।
পুলিশ জানায়, গত শনিবার রাতে বাগেরহাট-খুলনা সড়কে মাজার মোড়ে দুর্বৃত্তরা ইট ছুড়ে ঢাকাগামী দিগন্ত পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের জানালার কাচ ভেঙে দেয়। এ সময় ইট ও কাচের আঘাতে তিনজন যাত্রী আহত হন। একই রাতে দশানী বাদামতলা এলাকায় গুলতি দিয়ে লোহার টুকরা ছুড়ে দুর্বৃত্তরা একটি ট্রাকের কাচ ভেঙে দেয়।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী রেজাসহ অজ্ঞাতনামা কয়েক ব্যক্তির নামে মামলা করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীকে উদ্ধৃত করে ঘটনার সময় ওই এলাকায় টহলে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারীরা চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুটি স্থানে হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ যাওয়ার আগেই তারা পালিয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার (২২ জানুয়ারি) রাতে অবরোধকারীরা মহি চেয়ারম্যানের মোড়ে দিগন্ত পরিবহনের আরেকটি বাসে হামলা চালায়। বাসটির চালক মঞ্জু বলেন, হঠাৎ করে অন্ধকারের ভেতর থেকে দুজন গাড়ির সামনে এসে বড় ইট ছুড়ে দেয়। তারপর দৌড়ে গ্রামের ভেতর পালিয়ে যায়।
বাগেরহাট আন্তজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বাকী তালুকদার বলেন, ‘সোনাতলা থেকে শ্রীঘাট পর্যন্ত এলাকাটি আমাদের শ্রমিকদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই এলাকায় জেলা জামায়াতের কার্যালয়সহ বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থকদের একক আধিপত্য রয়েছে। তারা ঘটনা ঘটাচ্ছে কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না।’
এর আগে ১৬ জানুয়ারি রাতে বাগেরহাট-খুলনা সড়কের দশানী এলাকায় ঢাকাগামী দিগন্ত পরিবহনের একটি বাস, ১০ জানুয়ারি ভোরে শ্রীঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে আসা নুরজাহান পরিবহনের একটি বাস এবং ৮ জানুয়ারি গভীর রাতে দশানী এলাকায় কুয়াকাটা থেকে যশোরগামী সেভেন স্টার পরিবহনের একটি বাসের কাচ ইট ছুড়ে ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা বলেন, বাগেরহাট-খুলনা সড়কে নিয়মিত টহল রয়েছে। ছয়টি দল মোটরসাইকেলে টহল দিচ্ছে। এরই মাঝে দুর্বৃত্তরা চোরাগোপ্তা হামলা করছে। এরই মধ্যে পুলিশ সন্দেহভাজনদের তালিকা করেছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
সূত্র – প্রথম আলো