সুন্দরবনে তেল বিপর্যের পর শঙ্কা নিয়েই আবারও শ্যালা নদীর নৌপথ চালুর পর পণ্যবাহী নৌযান গুলো সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাতেও চলাচল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দীর্ঘ ২৭ দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার (৭ জানুয়ারি) থেকে শর্ত সাপেক্ষে শ্যালা নদী দিয়ে আবারও পণ্যবাহী নৌযান চলাচলেও অনুমতি দেয় সরকার।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘সরকার শ্যালা নদী দিয়ে শুধু মাত্র দিনের বেলায় নৌযান চলাচলে অনুমতি দিয়েছে। তবে কুয়াশা বেশি থাকলে দিনের বেলায়ও নৌযান চালানো যাবেনা সুন্দরবনের ভেতরের এ নদী দিয়ে।’
এছাড়া নৌযানগুলো শ্যালা নদীতে এ্যাঙ্কর (নোঙ্গর) করতে পারবেনা ও রাতে চলাচল করবে না। আর তেলবাহী কোনো জাহাজ বা ট্যাংকার চলাচলেও অনুমতি নেই বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের এক কর্মকর্তা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বুধবার মাগরিবের আযানের পর পর ১২টি পণ্যবাহী কার্গো একযোগে সুন্দরবনের শেলা নদীতে ঢুকে পড়ে। এসময় আমাদের টহলরত বনরক্ষীরা তাদের সিগনাল দিলে জাহাজ গুলো দ্রুত চালাতে শুরু করে।
এসময় সিমেন্টের কাঁচামালবাহী (ফ্লাইঅ্যাশ) শ্যামলী-১ নামে একটি কার্গোর পিছু ধাওয়া করে শেলা নদীর মৃগমারী এলাকা থেকে বনরক্ষীরা কার্গোটিকে আটক করে।
বৃহস্পতিবার সকালে আটক হওয়া ওই কার্গোটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন এসিএফ বেলায়েত হোসেন।
দুপুরে কার্গোর মালিক পক্ষ হাজির হয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতে চলার জন্য ক্ষমা চাইলে কার্গোটি ছেড়ে দেয় কোস্টগার্ড। কার্গোটি বর্তমানে মংলা বন্দরের পশুর নদীতে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
তবে বনবিভাগের অভিযোগ অস্বীকার করে কার্গোটির মালিক পক্ষ খুলনা ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান বিকেলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, শ্যামলী-১ ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল নিয়ে মংলা বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে পৌঁছালে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এসময় বনবিভাগ তাদের আটক করে। সুন্দরবনের শ্যালা নদীর নৌপথ দিয়ে বিকেলের পর নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তা ওই কার্গোর মাস্টারের জানা ছিলনা বলেও দবি করেন তিনি।
তাই ভুল করে রাতে কার্গোটি শ্যালা নদীর মৃগমারী এলাকায় পৌঁছালে বনবিভাগ কার্গোটি আটক করে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বনবিভাগ ও কোস্টগার্ড সব ধরনের কাগজপত্র পরীক্ষার পর ছেড়ে দিয়েছে। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।
এ ব্যাপারে মংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার আলাউদ্দিন নয়ন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুন্দরবনের শ্যালা নদী থেকে বনবিভাগের হাতে আটক শ্যামলী-১ নামে কার্গোটির ফিটনেস ও ধারণ ক্ষমতার কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক রয়েছে। তাই আপাতত কার্গোটিকে কোথাও না যেতে মংলা বন্দরের পশুর নদীতে থাকতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সকাল থেকে কোস্টগার্ডের সিজিএস পটুয়াখালী নামে একটি জাহাজ সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে অবস্থান করছে। নৌযানগুলো যাতে শৃঙ্খলা মেনে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে এবং অয়েল ট্যাংকার যাতে সুন্দরবনের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কোস্টগার্ড সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
প্রতিদিন বেলা এগারোটার পর ওই নৌপথ দিয়ে কোনো নৌযান মংলা বন্দরে ঢুকতে ও বেরোতে পারবেনা। কেননা সুন্দরবনের ভেতরের ওই নৌপথটি দিয়ে ঢুকতে ও বেরোতে অন্তত ছয় থেকে সাত ঘণ্টা সময় লাগে। বিষয়টি নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল, সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), সুন্দরবন একাডেমিসহ পরিবেশবিদরা সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌচলাচল স্থায়ী ভাবে বন্ধের জন্য দীর্ষদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন।