নাব্যতা হারানো মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌরুট খনন শেষে আগামী জুনের আগেই পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান।
রোববার বিকালে বাগেরহাটের রামপালে মন্ত্রী বলেন, নাব্য হারানো এ নৌপথটি খনন করতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে খনন কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই তারা খনন কাজ শুরু করবে।
৬ মাসের মধ্যে এ চ্যানেল পুরোপুরি চালু হবে এমন আশাবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিআইডাব্লিউটিএ’র ৮টি এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দু’টি ড্রেজার দিকে খনন কাজ চলছে।
বিকালে মংলা-ঘষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌপথ পুনঃখনন ও চ্যানেলের সংযোগ খালের বাঁধ অপসারণ কার্যক্রম ও অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে রামপাল উপজেলার কালিগঞ্জ এলাকায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির পর শ্যালার নৌপথ দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় হয়। জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি পরিবেশবিদরা এ নৌপথে যান চলাচল বন্ধের পরামর্শ দেয়।
এদিকে এ নৌপথ বন্ধ থাকায় বর্তমানে মংলা বন্দরের পণ্য পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। শ্যালা নদীর দুইপাশে আটকে পড়েছে পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী নৌযান।
এর পরিপ্রক্ষিতে গত শুক্রবার (২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ৫ জানুয়ারির মধ্যে সরকারের বন্ধ ওই নৌ রুটটি খুলে দিতে দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় ৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচির দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথ চালু না হওয়া পর্যন্ত সুন্দরবনের শেলা নদীর নৌপথটি আপাতত চালু করা হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নৌমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনে তেল বিপর্যের পর জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল সুন্দরবন পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা সরকারের কাছে এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সরকার ওই নৌপথটি ব্যবহার করবে কিনা তা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে মংলা বন্দরে আটকে পড়া নৌযানের বিষয়ে কী উদ্যোগ নেওয়া হবে তার বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
এ সময় তার সঙ্গে থাকা পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এই নৌপথটি নিয়মিত ড্রেজিংয়ের অভাবে পলি জমে নাব্যতা হারিয়েছে।
তাই এই নৌপথটিকে সচল রাখতে বন্দর ও বিআইডাব্লিউটিএ নিয়মিত এর তদারক করতে হবে বলে জানান তিনি।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বিআইডব্লিটিএ চেয়ারম্যান খন্দকার সামছুদ্দোহা, বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর হাবিবুর রহমান ভূইয়া, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদসহ স্থানীয় প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে নৌপরিবহন মন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রী ও বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান হেলিকপ্টারে করে রামপাল ডিগ্রি কলেজ মাঠে নামেন। পরে সেখান থেকে স্পিডবোটে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌচ্যানেল পরিদর্শন করেন।
বিকালে তার হেলিকপ্টারে করে আবারও তারা ঢাকার উদ্যেশে রওনা দেন।
মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম.এ সবুর রানা জানান, গত ৬ মাসে ৫টি ড্রেজার দিয়ে বিআইডাব্লিউটিএ’র খনন করেছে মাত্র ৭ লাখ ঘন মিটার। অথচ ৩ মাসে খননের কথা ছিল ৩০ লাখ ঘন মিটার। যা খুবই হতাশাব্যাঞ্জক। খাল খননের অবস্থা আরও খারাপ।
খনন কাজের এমন ধীরগতিতে অসন্তোষ জানিয়ে স্থানীয়দের দাবি এভাবে খনন করতে থাকলে, একদিকে খনন করা হবে অন্য দিকে আবারও পলি জমে ভরাট হয়ে যাবে। রাষ্ট্রিয় অর্থের অপচয় হবে।
এ জন্য খনন কাজের তত্ত্বাবধায়নে সেনাবাহিনীকে নিযোজিত করার দাবি জানিয়েছেন রামপাল উপজেলা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্নয় কমিটি।