সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ট্যাংকারডুবে তেল দূষণের প্রেক্ষাপটে বনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষক দল।
তেল দূষণের পর সুন্দরবন ঘুরে এসে বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ করে পর্যবেক্ষক দলটি।
বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের যৌথ পর্যবেক্ষণের প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরেন দল প্রধান এ্যামেলিয়া ওয়ালস্ট্রম বলেন, “এ দুর্ঘটনা একটা ওয়েকআপ কল। এতে ম্যানগ্রোভ ও জলজ বাস্তুতন্ত্রের ওপর আপাতত তেলের প্রভাব সীমিত। তবে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মোকাবেলায় নিয়মিত তদারকি ও সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ করা উচিত।”
গত ৯ ডিসেম্বর ট্যাংকার দুর্ঘটনায় সাড়ে ৩ লাখ লিটারেরও বেশি ফার্নেস অয়েল বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের নদী ও খালে ছড়িয়ে পড়ার পর বাণিজ্যিক নৌচলাচল আপাতত বন্ধ।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় নৌচলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে চাইলেও মংলা বন্দর সচল রাখার যুক্তি দেখিয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে তা ধোপে টেকেনি।
বুধবার জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, নৌ চলাচল এ মুহূর্তে বন্ধ থাকলেও বিকল্পগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
“এ মুহূর্তে ওই রুটে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিকল্প না নিয়ে দীর্ঘদিন তা বন্ধ রাখলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে।”
ওয়ালস্ট্রম বলেন, শ্যালা নদীসহ সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌচলাচল করতে দেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সুন্দরবনে তেল দূষণে জাতিসংঘ উদ্বেগ জানানোর পর গত ১৮ ডিসেম্বর বিশ্ব সংস্থাটির গবেষক দল বাংলাদেশে আসে। তারা গত ২২ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনে ছিলেন।
এ্যামেলিয়া ওয়ালস্ট্রমের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ন্যাশন ডিজেস্টার অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশনের (ইউএনডিএসি) প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইউএনডিপি, ইউএসএআইডি, ইউনিয়ন সিভিল প্রটেকশন ম্যাকানিজম, ফ্রান্স সরকার এবং ওয়ার্ল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির প্রতিনিধি মিলিয়ে ২৫ সদস্য। বিশেষজ্ঞ দলটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে।
প্রতিনিধি দলটি বলছে, দুর্ঘটনা পরবর্তী স্থানীয়দের তৎপরতা, ট্যাংকার চলাচল সাময়িক নিষিদ্ধ করা, জোয়ার-ভাটার পরিবর্তন অনুকূলে থাকায় তেলের বিস্তার অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
“নদীর পানি কম হওয়ায় সুন্দরবনের ভেতরের অংশে তেল প্রবেশ করতে পারেনি বলে ম্যানগ্রোভ বনের ওপর দৃশ্যত কোনো প্রভাব পড়েনি এবং বন্য প্রাণীর ওপরও তেলের মারাত্মক প্রভাব সীমিত পরিমাণে দেখা গেছে।”
দুর্ঘটনাস্থল থেকে আশপাশের প্রায় ৪০ কিলোমিটার জায়গায় নানান মাত্রায় তেলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে।
পরিবেশমন্ত্রী মঞ্জু বলেন, “এ দুর্ঘটনা আমাদের জন্য আগাম সতর্কবার্তা। এ ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুতিও ছিল না। এরপরও ইমেডিয়েট অ্যাকশন নিচ্ছি। আগামী দিনেও স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনসহ জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।