ভালো না লাগায় মায়ের খোঁজে ঘর ছেড়েছিলো বারো বছরের হৃদয়। এর পর যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, বাগেরহাট বিভাগীয় নিরাপদ হেফাজতখানা বা বাগেরহাট কারাগার, কোথাও ভালো লাগছে না তার।
এভাবে ছয় মাসেরও বেশী সময় ধরে আইনী হেফাজতে রয়েছে হৃদয়।
আদালত, পুলিশ, নিরাপত্তা কর্মী সবার কাছে তার একটাই আকুতি, ‘আমাকে নিয়ে চলো, মায়ের কাছে যাবো।’ কিন্তু মায়ের খোঁজ যে মিলছে না!
বাগেরাহট জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম আদালত-৩ এর বিচারকের কাছে গত ১৫ সেপ্টেম্বর দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী তার নাম জাকির হোসেন হৃদয়। পিতা নূর ইসলাম। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মোশাররফপুর গ্রামে।
হৃদয়ের দাবি, খুব ছোট অবস্থায় তার মা জোৎস্না বেগম বাচ্চু নামে জনৈক ব্যক্তিকে বিয়ে করে বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মাকরডোন গ্রামে এসে বসবাস করছেন। হৃদয় তার হারিয়ে যাওয়া মাকে খুঁজছে।
আদালতকে হৃদয় আরও জানায়, কতিপয় অচেনা ব্যক্তি তাকে নোয়াখালী থেকে মাইক্রোবাসে করে এনে বাগেরহাটের হযরত খান জাহান (রহ:) এর মাজার এলাকায় ফেলে রেখে গেছে।
গত ২৭ জুন বাগেরহাট সদর থানার ১১৫৮ নং সাধারণ ডায়েরী অনুযায়ী ঐ দিন দুপুরে এলাকাবাসী হযরত খান জাহান (র:) এর মাজার সংলগ্ন সড়কের যাত্রীছাউনি থেকে হৃদয়কে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করে। আদালতের নির্দেশে তাকে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখান থেকে গত ১০ ডিসেম্বর তাকে বাগেরহাট বিভাগীয় নিরাপত্তা হেফাজতখানায় এবং পরে ১২ ডিসেম্বর বাগেরহাট কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানো হয়।
মংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বাগেরাহট জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম আদালত-৩ এর বিচারক মো: নূরুজ্জামান গত ১১ ডিসেম্বর হৃদয়ের মা জোৎস্নাকে নিয়ে আদালতে হাজির হতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু মংলা উপজেলার মাকরডোন গ্রামে অনকে খোঁজ করেও বাচ্চু ও জোৎস্না নামে কোন দম্পতির খোঁজ পাওয়া যায়নি।’
বাগেরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আজম খান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ‘শিশুটিকে উদ্ধারের পর আমরা সব থানায় বেতার বার্তা পাঠিয়েছি। কোম্পানীগঞ্জে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু শিশুটির বলা ঠিকানায় তার পরিবারকে পাওয়া যায়নি।’
বাগেরহাট বিভাগীয় নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের প্রকল্প সমন্বয়কারী অ্যাড. আফরোজা খাতুন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, হৃদয়ের সাথে তার কথা হয়েছে।
হৃদয় বলেছে, তার নানাবাড়ি মংলায়। সেখানে সে মায়ের কাছে ছিলো। প্রায় নয় মাস আগে তার মা তাকে নোয়াখালীতে বাবার কাছে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে মাকে খুঁজতে এসে সে হারিয়ে যায়।
সে শুধু মায়ের কাছে ফিরতে চায়। আফরোজা মনে করেন, বিভিন্ন সময়ে হৃদয়ের দেয়া তথ্যে অসঙ্গতি থাকতে পারে। যে কারণে শিশুটির পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।