ট্যাঙ্কারডুবে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েলে সুন্দরবনের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বন্য এবং জলজ প্রাণীর ওপর সল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব নিরুপনে দ্বিতীয় দিনের মতো কাজ করেছে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল।
চলতি পরিদর্শন শেষে ৩১ ডিসেম্বর এ বিষয়ে সরকারকে একটি প্রাথমিক সুপারিশ দেওয়া হবে বলে বুধবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান এ্যামেলিয়া ওয়ালস্ট্রম।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক এলকায় এম.এল. ফ্লোটিং হোম (FLOTING HOME) লঞ্চে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের কাজের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ‘জয়েন ইউএন গভর্নমেন্ট ওয়েল স্পিল রেসপন্স মিশন’ এর প্রধান এ্যামেলিয়া ওয়ালস্ট্রম।
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা ও পশুর নদী এবং সংলগ্ন বিভিন্ন খালে তেল বিস্তৃত এলাকাগুলোতে এক সপ্তাহ (২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত) তাদের বিশেষজ্ঞ দল কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরবন বিষয়ে সরকারকে একটি প্রাথমিক সুপারিশ দিতে পারবো।
সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের ‘ওয়েল স্পিল রেসপন্স মিশন’ এই বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলটি গত ২২ ডিসেম্বর মংলায় পোঁছে, ওই দিন রাত থেকে তারা কাজ শুরু করেন।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ৫টি দলে ভাগ হয়ে স্পিডবোটে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও নমুনা সংগ্রহ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দলের প্রধান ওয়ালস্ট্রম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সুন্দরবনে তেলের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করতে। আমাদের ২৫ সদস্যের এ বিশেষজ্ঞ দলে ১১ জন আন্তর্জাতিক এবং ১৪ জন জতীয় পর্যবেক্ষক রয়েছেন। এরা সবাই তেল দুষণ রোধ, বন, বন্য প্রাণী সম্পর্কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অভিজ্ঞ এবং এ দেশের বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমাদের দলে সদ্যরা মোট ৬টি ভাগে ভাগ হয়ে সুন্দরবন এলাকায় কাজ করছে।’
৬টি গ্রুপের কাজের ব্যাপারে তিনি বলেন, এর মধ্যে একটি গ্রুপ দেখছে- যে তেল ছড়িয়ে পড়েছে তার বিস্তৃতি কতখানি, ২য় গ্রুপটি দেখছে তেলের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব, ৩য় গ্রুপটি দেখছে পানিতে প্রাণীজ ও উদ্ভিদের ওপর তেলের প্রভাব, ৪র্থ গ্রুপটি দেখছে বন্য প্রাণীর ওপর প্রভাব, ৫ম গ্রুপটি দেখছে বন সংলগ্ন মানুষের জীবন-জীবিকা এবং ৬ষ্ঠ গ্রুপটি ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেমের উপর তেলের প্রভাব দেখছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নমুনাও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষণ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে প্রতিনিধি দলের প্রধান আরো বলেন, ‘আসলে মাত্র ৭-১০ দিনে এ ধরনের একটি ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা সম্ভব নয়। অনেকে মনে করছেন জাতিসংঘের একটি দল এসেছে তারা এখনই ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরবেন। কিন্তু এটি আসলে তা নয়। এটি খুব কঠিন একটি কাজ।’
আমাদের এ সাত দিনে কাজ একটি প্রাথমিক বিশ্লেষণ, যা সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সহায়তা করবে। পরবর্তিতে এর একটি ফলোআপ আকারে আসবে, সে সময়ে বিস্তারিত বিষয়ে তুলে ধরা হবে। যাতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়ক্ষতি ও করণীয় থাকবে।
গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কাছে শ্যালা নদীতে জাহাজের ধাক্কায় তেলবাহী ট্যাংকার ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ ডুবে যায়। ট্যাংকারটিতে এসময় সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি ফার্নেস অয়েল ছিল। যা ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনের বিস্তৃণ এলাকায়।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ১৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের কাছে সহায়তা চেয়ে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ এই বিশেষজ্ঞ দল পাঠয়।