প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মংলা বন্দরের আন্তর্জাতিক নৌরুট মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল সংলগ্ন ২৩টি খালের অবৈধ বাঁধ ও পলি অপসারণ কাজ শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক জেলার রামপাল উপজেলা সদরের ওড়াবুনিয়া খালের প্রবেশ মুখের বাঁধ কেটে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন।
সম্প্রতি সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল সংলগ্ন সব অবৈধ চিংড়ি ঘের অপসারণ এবং শাখা খালগুলো দখল মুক্ত করতে নির্দেশ দেন। চ্যানেলের শুকিয়ে যওয়া ২২ কিলোমিটার অংশের খনন ছাড়াও আন্তর্জাতিক এই নৌরুটি দ্রুত চালু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।
এ নির্দেশ বাস্তবায়নে মঙ্গলবার থেকে স্থানীয় প্রশাসন ঘষিয়াখালী চ্যানেল সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার কুমারখালী অংশের অবস্থিত সব অবৈধ চিংড়ি ঘের উচ্ছেদ ও বাঁধ অপসারণের কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ভারত নৌবাণিজ্য প্রটোকলভুক্ত আন্তর্জাতিক নৌ-পথটি দ্রুত চালুর উদ্যোগ গ্রহণ এবং সরকারি রেকর্ডিয় খাল অবৈধভাবে দখল করে গড়ে ওঠা চিংড়ি ঘের অপসারণ শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তবে, তাদের দাবি নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে সংযোগ খালগুলোকে দখল মুক্ত রাখতে না পারলে ঘষিয়াখালী চ্যানেলের খনন কাজ সফল হবে না।
রামপাল উপজেলা সদরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, দীর্ঘ ২০-২৫ বছর ধরে এ নদীর সংযোগ খালগুলোতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা চিংড়ি চাষ করে আসছিলেন। ফলে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে এসব খাল ও নদীতে পানি সরবরাহ।
এ কারণে চ্যানেলটিতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়ে পলি জমে ধীরে ধীরে কুমারখালী নদীসহ পুরো নৌপথটি বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলার পেড়িখালি এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন শেখ (৫৬) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, এ নদী দিয়ে ৫/৬ বছর আগেও বড় বড় জাহাজ, কার্গ, লঞ্চ-ইস্টিমার চলত। কিন্তু পলি পড়ে নদী মরে যাওয়ায় এখন মানুষ পায়ে হেঁটে পার হচ্ছে এ নদী।
মংলা বন্দর কর্তপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডোর হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া জানায়, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ২২ কিলোমিটার পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে, গত ৩ বছর বিকল্প হিসেবে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে দীর্ঘ পথ ঘুরে নৌযান চলাচল করছে।
নৌচ্যানেলটি পুনর্জীবিত করতে চলতি বছরের পহেলা জুলাই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) প্রায় তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন কাজ শুরু করে। প্রায় ছয় মাসে তারা তাদের নিজস্ব ৫টি ড্রেজার দিয়ে ২২ কিলোমিটার অংশের মাত্র ৪ কিলোমিটার খনন করেছে।
তবে, স্থানীয়দের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল নদী সংলগ্ন শাখা খালগুলো দখল মুক্ত না করে এ খনন কাজ কোনো কাজে আসবে না। আর দেরিতে হলেও পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে চ্যানেলের সংলগ্ন অর্ধশতাধিক খাল দখল মুক্ত ও পলি অপসারণ কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘এই এলাকায় চিংড়ি চাষ শুরুর সময় থেকে আমি এর বিরোধীতা করে আসছি। সে সময় স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে পাইনি। তখন ব্যবস্থা নেওয়া গেলে আজ এ অবস্থা তৈরি হতো না। এখন প্রশাসন পাশে আছে।’
স্থানীয়রাও চায় নৌ পথটি দ্রুতই চালু হোক। তাই আশা করছি দ্রুতই কাজ শেষ হবে।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, রেকর্ডির সরকারি যেসব খাল অবৈধভাবে দখল করে চিংড়ি চাষ চলছিলো তা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এক মাস ধরে এ কাজ চলবে।
খালের বাঁধ অপসারণ কাজের উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন- বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মু. শুকুর আলী, পুলিশ সুপার মো. নিজামুল হক মোল্লা, রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাফা মো. আরিফসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধায়নে শুরু হওয়া সরকারি খালের এ অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ ও পলি অপসারণ কাছের সার্বিক সমন্বয় করছেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ।