সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনার ছড়িয়ে পড়া তেল সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না বলে বার বার দাবি করছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী।
তবে, তার এ মতের সাথে বিন্যমত পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং বিশেজ্ঞদের। তারা বলছেন, সুন্দরবনের উপর অবশ্যই ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে শনিবার নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সংবাদিকদের তেলে বনের কোনো ক্ষতি না হওয়ার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন।
সচিবালয়ে জাহাজডুবির ঘটনায় এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার রাকিবুর রহমান তার মত প্রকাশ করেন। পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আলি ইসলাম জ্যাকব সভায় সভাপতিত্ব করেন।
নৌপরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপমন্ত্রী জবাব দিতে ভারপ্রাপ্ত সচিবের কাছে মাইক্রোফোন এগিয়ে দেন।
ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী বক্তব্য তার নিজস্ব, আর আমাদের বক্তব্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের। এ ঘটনায় সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি হবে, তবে কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে।
এর আগে তিনি বলেন, তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব অনেক অনেক বেশি। কতটুকু বেশি তা আমরা এখনো আন্দাজ করতে সক্ষম হচ্ছি না।
গত ৯ ডিসেম্বর বাগেরহাটের সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে অপর একটি জাহাজের ধাক্কায় ‘সাউদার্ন স্টার-৭’ ডুবে যায়। সাউদার্ন তিন লাখ ৫৭ হাজার লিটার ফার্নেস ওয়েল বহন করছিল। ডুবে যাওয়া জাহাজের তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শ্যালা নদীর এ রুট স্থায়ী বন্ধ চায় বন মন্ত্রণালয়
সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যান চলাচলে শ্যালা নদীর এ রুটের স্থায়ী বন্ধ চায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। পরিবেশ উপমন্ত্রী বলেন, এ রুটটির অনুমোদন দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আমরা বহুবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি, অনুরোধ করেছি সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে এ রুট বন্ধ করতে হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়ও এ নৌরুট স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানাব।
গত ১০ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সুন্দরবনের শ্যালা নদীর রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
উপমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের যে এলাকায় জাহাজ ডুবেছে সেখানখার অধিবাসীদের চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এজন্য সেখানে মেডিকেল টিম পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। হোয়াইট ফিস রক্ষার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে সংগৃহীত তেল সংগ্রহের জন্য আরো ক্রয় কেন্দ্র খুলতে বলেছি আমরা। সভায় তেলের দাম বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অধিবাসীদের সহায়তা দিতে দুযোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কেমিক্যাল ছিটিয়ে তেল দূর করার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে উপমন্ত্রী বলেন, হুট করে কেমিক্যাল ছিটানো ঠিক হবে না। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
‘ডলফিন দেখা গেছে, আচরণ স্বাভাবিক’
তেল ছড়িয়ে পড়ার পর সুন্দরবনের পরিবেশের বর্ণনা দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, গতকালও (শনিবার) ডলফিন দেখা গেছে, গায়ে তেল লাগেনি। বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছে, এ পর্যায়ে ডলফিনদের কোনো অসুস্থতা নেই, কোনো অস্বাভাবিক আচরণও তারা লক্ষ্য করেননি।
একটি পত্রিকায় মৃত ডলফিনে ছবি ছাপা হয়েছে—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সচিব বলেন, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি।
উপমন্ত্রী বলেন, আমরা তেল অপসারণের দিকে নজর দিচ্ছি বেশি। এখন ১০০ নৌকায় ৩০০ জন তেল অপসারণের কাজ করছে। তেল সংগ্রহের নৌকা সংখ্যা ৫০০-তে উন্নীত করতে প্রধান বন সংরক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তেল নদীর ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তেল অপসারণ করা যায়।