সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডোবায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কার মাঝে একটি মৃত ডলফিন ভাসতে দেখা গেছে।
বিদেশী পর্যটকদের একটি লঞ্চ থেকে শুক্রবার অর্থাৎ দুর্ঘটনার তিনদিন পর মৃত ডলফিনটির ছবিও তোলা হয়। এমন খবর প্রকাশ করেছে বিবিসি।
লঞ্চটি যে পর্যটন সংস্থার, সেই বেঙ্গল ট্যুরসের কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, শুক্রবার বিদেশী পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার সময় শেলা নদীর তাম্বুলবুনিয়া এলাকায় তারা একটি মৃত ডলফিন ভাসতে দেখেন।
পর্যটকদের দেখাতে স্পিড বোটে করে মৃত ডলফিনটিকে লঞ্চের কাছে নিয়ে আসনে তারা। ছবি তোলার পর আবার সেটিকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে, রোববার দেশের প্রথম সারির একটি ইংরেজী দৈনিক ছবিসহ ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় ডলফিন মারা গছে বলে সংবাদ প্রকাশ করে।
খবরে বলা হয় ছবির চিত্র ধারক ফটো সাংবাদিক সৈয়দ জাকির হোসেন গত ২৪ ঘণ্টায় সুন্দরবনের অনেক এলাকায় ঘুরেছেন। তিনিই প্রথম গতকাল শ্যালা নদীর হারিণটানা-তাম্বুলবুনিয়া চ্যানেলে একটি মৃত ইরাবতি ডলফিনের মৃতদেহের খোঁজ পান। তেলবাহী ট্যাংকার যেখানে ডুবেছিল সেখান থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে মৃত ইরাবতিকে পাওয়া যায়।
শুক্রবারেই বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছিল। তবে এই প্রথম কোনও ডলফিনে মারা যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মৃত্যুর কারণ বোঝা যায়নি
মাসুদ হোসেন বলেন, কেন এই ডলফিনটি মারা গেছে তা তারা বুঝতে পারেন নি। সেটির গায়ে কোনো তেলের আস্তরণও তারা দেখেননি।
মি. হোসেন বলেন, ডলফিনটি ছিল বিরল প্রজাতির ইরাবতী ডলফিন।
মঙ্গলবার সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি তেলে নিয়ে ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নামে ট্যাংকারটি শেলা নদীতে ডুবে যাওয়ার পর ইরাবতী ডলফিনের ওপর তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।
তিনি জানান, দেখে মনে হয়েছে, ডলফিনটির পেটের দিকে কাঁকড়া খেয়ে ফেলছিল। চোখ খোবলানো ছিল।
ডলফিনটি খুঁজছে বনবিভাগ
এদিকে বনবিভাগ বলছে, পত্রিকার মাধ্যমে খবর শুনে তারা এর সত্যতা যাচাই এর চেষ্টা করছে।
সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমির হোসেন চৌধুরী বলেছেন, তাম্বুলবুনিয়ার কাছাকাছি দু’টি বন অফিসের রক্ষীরা কয়েকঘন্টা ধরে খুঁজেও কোনো ডলফিনের মৃতদেহ পায়নি।
তিনি বলেন, সোমবার সকালে তারা আবার খুঁজবেন। পাওয়া গেলে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করবেন।
তবে বেঙ্গর ট্যুরসের মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, তাদের লঞ্চে সে সময় বনবিভাগের দু’জন রক্ষীও ছিলেন।
কুমিরের গায়ে তেলের আস্তরণ
স্থানীয় সাংবাদিক আহসান হাবিব হাসান, যিনি রোববার সারাদিন ইঞ্জিনের নৌকায় শেলা নদী এবং আশপাশ ঘুরেছেন, কোনো জলজ প্রাণীর মৃতদেহ ভাসতে তিনি দেখেননি।
মি হাসান জানান, নদীর চরে পাশাপাশি শুয়ে থাকা দুটো কুমিরের গায়ে তেলের আস্তরণ দেখতে পেয়েছেন তিনি।
“তেলের কারণে কুমির দু’টোকে লালচে দেখাচিছল।” শ্যালা নদীতে হঠাৎ করেই মাছ মিলছে না বলে স্থানীয় জেলেরা তাকে জানিয়েছেন বলে জানান ঐ সাংবাদিক।
অন্যদিকে মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, শেলা নদীর মিরগামাটি থেকে তাম্বুলবুনিয়া পর্যন্ত নদীর চরে কুমিরের ডিম পাড়ার জায়গা। এই পুরো এলাকাটির নদীর পাড়গুলো তেলের আস্তরণে কালো হয়ে গেছে।
তার আশঙ্কা অদূর ভবিষ্যতে কুমির এখানে ডিম পাড়তে পারবে কিনা।
সূত্র – বিবিসি।